চক্রান্ত নাকি বাস্তবতা? ‘কেমট্রেইল’ নিয়ে আইন তৈরির তোড়জোড়!

শিরোনাম: ‘কেমট্রেইলস’ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে আইন প্রনয়নের চেষ্টা, জলবায়ু গবেষণায় বাধার আশঙ্কা।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এমন কিছু আইনের প্রস্তাব উঠেছে, যা ‘কেমট্রেইলস’ নামে পরিচিত একটি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সরকার বিমান থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ছিটিয়ে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, যা সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানসম্মত নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আইন প্রণয়ন হলে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আসলে, ‘কেমট্রেইলস’ হলো একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, যেখানে বলা হয়, বিমানের আকাশে তৈরি হওয়া সাদা কুণ্ডলীগুলো (con trails) আসলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য, যা সরকার আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য ছড়াচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বহুবার এই তত্ত্বের অসারতা প্রমাণ করেছেন।

বিমানের কুণ্ডলী মূলত জলীয় বাষ্প, যা বিমানের ইঞ্জিন থেকে নির্গত হয় এবং উচ্চতার কারণে ঘনীভূত হয়ে মেঘের মতো আকার ধারণ করে।

ফ্লোরিডার আইনসভায় এমন একটি বিল আনা হয়েছে, যেখানে আবহাওয়া পরিবর্তন বা জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত কোনো কাজ নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এই বিলের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কেউ যদি এই ধরনের কোনো কাজে জড়িত থাকে, তাহলে তাকে এক লক্ষ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

আলাবামাতেও একই ধরনের একটি বিলের আলোচনা হয়েছে। এর আগে, টেনেসিতেও বায়ুবাহিত রাসায়নিক পদার্থ ছড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যা সমালোচকদের মতে ছিল ‘অর্থহীন’।

এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উত্থান হয়েছে মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে। এই তালিকায় রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের প্রধান এবং রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন।

তারা প্রায়ই এই তত্ত্বের পক্ষে কথা বলেন এবং একে সমর্থন করেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে হওয়া চরম আবহাওয়ার কারণে অনেক মানুষ এই ধরনের ভিত্তিহীন তত্ত্বে বিশ্বাস স্থাপন করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আইন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিজ্ঞানসম্মত গবেষণাগুলোতে বাধা সৃষ্টি করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ।

এমন পরিস্থিতিতে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা অত্যন্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং’ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ থেকে সৃষ্ট উষ্ণায়নের প্রভাব কমানো। এর মধ্যে অন্যতম একটি ধারণা হলো, সূর্যের আলোকরশ্মিকে প্রতিফলিত করার জন্য বায়ুমণ্ডলে কণা ছড়ানো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়ার চরম পরিস্থিতি প্রায়ই দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে এবং এর সঙ্গে ‘কেমট্রেইলস’ তত্ত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *