ভয়ংকর! চেরনোবিলে ড্রোন হামলায় পরমাণু বিপর্যয়ের স্মৃতি!

**চেরনোবিলে রুশ ড্রোন হামলা, কোটি কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা**

ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সম্প্রতি রাশিয়ার একটি ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় সেখানকার নিউ সেফ কনফাইনমেন্ট (এনএসসি) কাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা ১৯৮৬ সালের ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি বহন করে।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে এবং এটি মেরামতের জন্য কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে হওয়া এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি না হলেও, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০১৭ সালে নির্মিত বিশাল আকারের এনএসসি কাঠামোটি। এটি ছিল মূলত ধ্বংস হয়ে যাওয়া চুল্লিকে আবদ্ধ করে রাখার উদ্দেশ্যে তৈরি।

প্রকৌশলীদের মতে, পুরো কাঠামোর মেরামত করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন হবে, কারণ বিদ্যমান আন্তর্জাতিক তহবিলে থাকা অর্থের পরিমাণ এই মেরামতের জন্য যথেষ্ট নয়।

জানা গেছে, ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভোররাতের দিকে ড্রোনটি আঘাত হানে। এর ফলে ১১০ মিটার উঁচু স্টিলের কাঠামোটির বাইরের অংশে ১৫ বর্গমিটারের একটি ছিদ্র তৈরি হয়। এছাড়াও, ভেতরের আবরণে আগুন ধরে যায়, যা নেভাতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লেগেছিল।

এই এনএসসি কাঠামোটি দুটি বিশাল আর্চ বা খিলানের সমন্বয়ে গঠিত, যা দুটি বড় বিমানের থেকেও লম্বা। ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে চেরনোবিলের ৪ নম্বর চুল্লিতে বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল।

তবে, সাম্প্রতিক হামলায় কাঠামোটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর ভেতরের তেজস্ক্রিয় ধুলো বাইরে আসার এবং বৃষ্টির পানি প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও ইউক্রেনের পরিবেশ সুরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে এবং তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে কাঠামোর ক্ষয় হওয়ার এবং এর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত মেরামতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এক মার্কিন প্রকৌশলী, যিনি ১৫ বছর ধরে চেরনোবিলের আশ্রয়কেন্দ্রের নকশা ও নির্মাণে কাজ করেছেন, তিনি বলেছেন, “মেরামত না করা কোনো বিকল্প নয়।” তার মতে, সম্পূর্ণ মেরামতের জন্য কয়েক কোটি ডলার খরচ হতে পারে এবং এতে মাস থেকে বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

আক্রমণে ব্যবহৃত ড্রোনটি ছিল একটি রুশ শাহেদ ড্রোন, যার দাম ছিল প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ ডলার। অন্যদিকে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এই হামলাটি ছিল সম্ভবত রাশিয়ার পরিকল্পিত যুদ্ধাপরাধ। তবে, রাশিয়া এই ঘটনার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।

চেরনোবিল দুর্ঘটনার স্মৃতি আজও বিশ্বজুড়ে ভীতি জাগায়। ১৯৮৬ সালের ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন অনেকে এবং এলাকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে এখানে দুটি আলাদা নিরাপত্তা অঞ্চল রয়েছে।

মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান সম্ভবত পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসবে। উল্লেখ্য, এই কাঠামো নির্মাণের জন্য ২৬টি দেশ অর্থ সহায়তা করেছিল, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং এমনকি রাশিয়াও ছিল।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *