জেনে নিন: কিভাবে চেরি ফুল মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলো আমেরিকায়!

বসন্তের আগমনীতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি-তে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয়। ন্যাশনাল মলের আশেপাশে এবং টাইডাল বেসিনের তীরে ফুটে ওঠা সাদা-গোলাপি ফুলের সারি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্র।

প্রতি বছর, এই সময়ে এখানে অনুষ্ঠিত হয় চেরি ব্লসম উৎসব, যা দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আগমন ঘটে। কিন্তু একসময় এই স্থানটিতে একটিও চেরি গাছ ছিল না।

এই ফুলের গাছগুলো কীভাবে সুদূর জাপান থেকে আমেরিকায় পৌঁছাল, সেই গল্পটিও কম আকর্ষণীয় নয়। এর পেছনে ছিলেন কয়েকজন উদ্যমী মানুষ, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের খাদ্য অনুসন্ধানকারী ডেভিড ফেয়ারচাইল্ড ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি নতুন ধরনের গাছপালা খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন।

১৯০২ সালে, জাপানে গিয়ে তিনি প্রথম ‘সাকুরা’ বা চেরি ফুলের গাছ দেখেন। এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি এই গাছগুলো নিজের দেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন।

তিনি প্রথমে ১২৫টি চেরি গাছের চারা আনেন এবং সেগুলো মেরিল্যান্ডে নিজের বাড়ির উঠানে লাগান।

ফেয়ারচাইল্ডের এই উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রথম নারী লেখক, ফটোগ্রাফার এবং বোর্ডের সদস্য, এলিজা স্কিডমোর ওয়াশিংটন ডিসিতে চেরি গাছ রোপণের জন্য তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড-এর কাছে আবেদন করেন।

জাপানে কাটানো সময়কালে তোলা চেরি ফুলের ছবিগুলো দেখিয়ে তিনি এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

পরবর্তীতে, প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট ওয়াশিংটন ডিসিকে আরও সুন্দর করার কথা ভাবেন এবং তৎকালীন ফার্স্ট লেডি হেলেন টার্ফ এই কাজে চেরি ফুলের গুরুত্ব অনুভব করেন।

প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টার্ফও জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি সুযোগ খুঁজে পান।

জাপানের তৎকালীন মেয়র ১৯০৯ সালে ওয়াশিংটনে ২,০০০ চেরি গাছের চারা পাঠান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কীটপতঙ্গের কারণে প্রথম চালানটি ব্যর্থ হয়।

পরে জাপান সরকার আরও ৩,০২০টি উন্নত মানের চারা পাঠায়। অবশেষে, ১৯১২ সালের ২৭শে মার্চ, ওয়েস্ট পোটোম্যাক পার্কে এক অনুষ্ঠানে এই গাছগুলো রোপণ করা হয়।

এই গাছগুলো রোপণের দুই বছরের মধ্যেই আমেরিকানদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র সরকারও জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তাদের উপহারস্বরূপ উজ্জ্বল সাদা ফুলের ডগউড গাছ পাঠায়।

বর্তমানে, মূল গাছগুলোর খুব কমই অবশিষ্ট আছে। চেরি গাছ সাধারণত ২৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

ওয়াশিংটন মনুমেন্টের পাশে, যেখানে প্রথম গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল, সেখানে আজও পুরনো দিনের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কয়েকটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *