শেভরন তেল কোম্পানিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকূলীয় জলাভূমি ধ্বংসের জন্য ৭৪ কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে একটি আদালত। এই বিশাল অংকের অর্থ পরিশোধ করতে হবে তাদের।
শুক্রবারের এই রায়টি ছিল বিগত কয়েক বছর ধরে চলা একটি মামলার চূড়ান্ত ফল।
আদালতের এই রায়ে জানা যায়, শেভরনের অধীনস্থ টেক্সাকো নামক একটি তেল কোম্পানি, ড্রেনেজ খাল খনন, কূপ খনন এবং জলাভূমিতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশের ক্ষতি করেছে। এই কারণে তাদের এই ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।
উল্লেখ, এই মামলাটি ছিল ৪২টি মামলার মধ্যে প্রথমটি, যা প্রায় ১২ বছর আগে রুজু করা হয়েছিল। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের তেল ও গ্যাস প্রকল্পের কারণে এই অঞ্চলের জলাভূমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লুইজিয়ানার উপকূলীয় জলাভূমিগুলো সেখানকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় থেকে এলাকাটিকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, লুইজিয়ানার উপকূলীয় জলাভূমিগুলো দেশের মধ্যে সবচেয়ে সংকটপূর্ণ পরিবেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
এখানে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের তুলনায় বেশি হারে জলাভূমি বিলুপ্ত হচ্ছে। ১৯৩২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে লুইজিয়ানার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৪,৮৩৩ বর্গকিলোমিটার জমির পরিবর্তন হয়েছে, যা ঐ সময়ের শুরুতে বিদ্যমান জমির প্রায় ২৫ শতাংশের সমান।
প্লাকুইমাইনস প্যারিশ (কাউন্টি) কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে শেভরনের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করে। শুরুতে তারা ২.৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছিল।
এই প্যারিশের আরও ২০টি মামলা অন্যান্য তেল কোম্পানির বিরুদ্ধে বিচারাধীন রয়েছে। আদালতের রায়ে ভূমি ক্ষয়ক্ষতির জন্য কোম্পানিটিকে প্রায় ৫৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার, দূষণের জন্য ১৬ কোটি ১০ লক্ষ ডলার এবং পরিত্যক্ত সরঞ্জামের জন্য আরও ৮৬ লক্ষ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।
লুইজিয়ানার হয়ে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জিম্মি ফেয়ারক্লোথ জুনিয়র বিচারকদের বলেন, শেভরন কর্তৃপক্ষ একসময় বলেছিল, প্লাকুইমাইনস প্যারিশ সংরক্ষণের যোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সমাজ উপকূলের উপর নির্ভরশীল, আমাদের পরিবারগুলো এখানেই বেড়ে উঠেছে, আমাদের সন্তানেরা এই উপকূলে স্কুলে যায়। লুইজিয়ানা রাজ্য উপকূলকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
রাজ্যের উপকূল সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধার কর্তৃপক্ষের মতে, আগামী ৫০ বছরে লুইজিয়ানা আরও প্রায় ৩,০০০ বর্গমাইল জমি হারাতে পারে।
তবে, শেভরনের আইনজীবী মাইক ফিলিপস এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “প্লাকুইমাইনসে ভূমি ক্ষয়ের জন্য শেভরন দায়ী নয়।” তার মতে, এই রায়টি “অন্যায়” এবং এতে “অনেকগুলো আইনি ভুল” রয়েছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব আবারও সামনে এসেছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন শিল্প প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনসহ অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা যায়।
এই ধরনের ঘটনাগুলো পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং কর্পোরেট দায়বদ্ধতার বিষয়টি আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়।
এই রায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জলাভূমি এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিরূপণে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তথ্য সূত্র: The Guardian