শহরে আতঙ্ক! সেনা নামানোর খবরে কী প্রস্তুতি? উদ্বেগে সবাই!

শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আশঙ্কার মধ্যে প্রস্তুতি শুরু।

যুক্তরাষ্ট্রের শহর শিকাগোতে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা মোতায়েন করা হতে পারে, এমন একটি উদ্বেগের মধ্যে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে, কবে নাগাদ এই সেনা মোতায়েন হতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইলিনয় রাজ্যের গভর্নর জেবি প্রিটজকার জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কোনো পরিকল্পনা সম্পর্কে রাজ্যকে এখনো কিছু জানায়নি। যদিও তিনি শুনেছেন যে শুক্রবারের মধ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেখানে প্রস্তুত থাকতে পারে এবং শনিবার থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শহরটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তবে কবে নাগাদ এই সেনা মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিকাগোতে সেনা পাঠানোর ‘ உடன কোনো পরিকল্পনা নেই।’

স্থানীয় ও রাজ্য পর্যায়ের রাজনীতিবিদরা এই সম্ভাব্য পদক্ষেপের মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গভর্নর প্রিটজকার জানিয়েছেন, তিনি এবং তার প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

গভর্নর প্রিটজকার জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন সেনা মোতায়েনের কারণ না জানালে তারা কোনো মামলা করবেন না। তবে সেনা মোতায়েন করা হলে, তারা অবশ্যই আদালতে যাবেন। ইলিনয় রাজ্য এর আগেও ফেডারেল সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গেছে। বিশেষ করে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের প্রমাণ দিতে পারে না, তাদের জন্য ফেডারেল সাহায্য বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা মামলা করেছিল।

শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসনও ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, শিকাগো পুলিশ বিভাগ ফেডারেল এজেন্টদের সঙ্গে কোনো ধরনের যৌথ অভিযানে অংশ নেবে না। মেয়রের কার্যালয় থেকে জারি করা এক নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনো পুলিশ সদস্য ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক বাহিনী বা ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কোনো অভিযানে অংশ নিতে পারবে না।

মেয়র জনসন আরও বলেছেন, শহর কর্তৃপক্ষ ফেডারেল সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে লড়াই চালাবে, যা শহরের বাসিন্দাদের অধিকার লঙ্ঘন করে।

এদিকে, সান ফ্রান্সিসকোতে একটি ফেডারেল আদালত রায় দিয়েছে যে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করেছে। আদালত প্রশাসনকে এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

শিকাগোর শিক্ষক ইউনিয়ন এরই মধ্যে অভিভাবকদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে। লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা নীরব থাকতে পারে, তাদের জিনিসপত্র তল্লাশির অনুমতি দিতে তারা বাধ্য নয় এবং তাদের জন্মস্থান বা নাগরিকত্বের বিষয়ে তথ্য দিতেও তারা বাধ্য নয়।

অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শিকাগোতে মেক্সিকান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসব ও প্যারেডের আয়োজন করা হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের কারণে এই উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে পারে। গভর্নর প্রিটজকার বলেছেন, তিনি শুনেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সম্ভবত মেক্সিকান স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের সময় শিকাগোতে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছেন।

পিলসেন এলাকার মেক্সিকান স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডের আয়োজক ভিকি লুগো জানিয়েছেন, তারা কোনো উদ্বেগে নেই, তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। তাই অভিবাসী ও শরণার্থী অধিকার বিষয়ক ইলিনয় কোয়ালিশন সেখানে উপস্থিত থাকবে এবং লোকজনকে তাদের অধিকার সম্পর্কে অবহিত করবে।

ভিকি লুগো আরও বলেন, স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করাটা তাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *