প্রথম আমেরিকান পোপ: শিকাগোর মানুষ আনন্দে আত্মহারা!

বিশ্বের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রথমবারের মতো পোপ নির্বাচিত হলেন। শিকাগোর কার্ডিনাল রবার্ট প্রিভোস্ট এখন পোপ লিও চতুর্দশ। গত মাসে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে আমেরিকার শিকাগো শহর, যেখানে পোপ লিও-এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।

সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর শিকাগোর বিভিন্ন চার্চে ও ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আনন্দের ঢেউ লাগে। খবর পাওয়ার পরেই শহরের ‘ফ্রান্সেস জেভিয়ার ওয়ার্ড স্কুল’-এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা টেলিভিশন স্ক্রিনের সামনে এসে বসেন। নতুন পোপের ছবি পর্দায় ভেসে উঠতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা।

স্কুলের পরিচালক মেরি পেরোত্তি জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই খবরটি ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। তাদের কাছে এটা বিশাল আনন্দের এবং গর্বের বিষয় যে, তাদের শহরের একজন মানুষ পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

৬৯ বছর বয়সী কার্ডিনাল রবার্ট প্রিভোস্টের জন্ম ১৯৫৫ সালে, শিকাগোর ব্রোঞ্জভিলে। তিনি ডলটনে বেড়ে ওঠেন এবং সেন্ট মেরি অফ অ্যাজাম্পশন স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে তিনি ‘ক্যাথলিক থিওলজিক্যাল ইউনিয়ন অফ শিকাগো’ থেকে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয় ক্যাথলিক স্কুলগুলোতে শিক্ষকতাও করেছেন।

পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেন্ট মেরির প্রাক্তন ছাত্র জন ডগনি জানান, প্রিভোস্ট ছোটবেলা থেকেই সবার সঙ্গে মিশুক ছিলেন, সবসময় সহানুভূতি নিয়ে মানুষের পাশে থাকতেন। তাঁর এই মানবিক গুণাবলী দেখে সবাই বুঝত যে তিনি একদিন ধর্মযাজক হবেন।

ডলটনের বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী লিন্ডা আইকম্যানও এই খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার স্কুলের, আমার শহরের একজন মানুষ পোপ হয়েছেন, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে!’

শিকাগোর স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রাউল রায়মুন্ডো আশা প্রকাশ করে বলেন, পোপ লিও চতুর্দশ যেন পোপ ফ্রান্সিসের ন্যায় সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দরিদ্র ও অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীলতার ধারা অব্যাহত রাখেন।

পোপ নির্বাচনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে হলি নেইম ক্যাথেড্রালে প্রায় দুই ডজন মানুষ প্রার্থনা করতে একত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত লরেল লেগল জানান, তিনি ক্যাথলিক না হলেও এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শিকাগোর মানুষজন পোপকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করেছেন। কেউ শহরের বিশেষ খাবার নিয়ে আলোচনা করেছেন, আবার কেউ বা বাস্কেটবল টিমের আদলে টি-শার্ট তৈরি করেছেন। সব মিলিয়ে শিকাগোর মানুষের মধ্যে পোপকে নিয়ে উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

শিকাগোর মানুষের জন্য, বিশেষ করে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য, তাঁদের শহর থেকে একজন মানুষ পোপ নির্বাচিত হওয়া অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তাঁদের বিশ্বাস, পোপ লিও চতুর্দশ তাঁর শিকাগোর বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতার আলোকে ন্যায়বিচার ও মানবতার বার্তা বিশ্বজুড়ে পৌঁছে দেবেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *