শিকাগোর এক ফুটপাথের ‘ইঁদুর গর্ত’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলেছে বেশ কয়েক মাস ধরে। সদ্য ঢালাই করা কংক্রিটের মধ্যে একটি প্রাণীর ছাপ নিয়ে প্রথমে সবাই ধরে নিয়েছিল সেটি কোনো ইঁদুরের কীর্তি।
কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে আসল সত্যিটা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভবত কোনো কাঠবিড়ালিই এই গর্তের আসল কারিগর।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের রোজকো ভিলেজ এলাকায় কংক্রিটের ওপর তৈরি হওয়া এই ছাপটি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকে আদর করে এর নাম দিয়েছিলেন ‘স্প্ল্যাটাতুই’।
২০২০-এর দশকে এই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে শিল্পী উইনস্লো ডুমেইনের একটি টুইটের মাধ্যমে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
এরপর থেকেই এটি শিকাগোর অন্যতম জনপ্রিয় সেলফি তোলার স্থানে পরিণত হয়। এমনকি অনেকে সেখানে কয়েন ও অন্যান্য জিনিস উৎসর্গ করতে শুরু করে।
কেউ কেউ নাকি এই চিহ্নের পাশে দাঁড়িয়ে বিয়েও সেরেছেন!
বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল দেখা দেয় ইউনিভার্সিটি অফ টেনেসি, নক্সভিলের বাস্তুবিদ্যা ও বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ড. মাইকেল গ্রানাটোস্কির মনে। তিনি জানান, জনসাধারণের মধ্যে প্রকৃতি এবং চারপাশের জগৎ সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করার দারুণ একটি উপায় এটি।
বিজ্ঞানীরা জীবাশ্মের পদচিহ্ন থেকে কোন প্রাণীর, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করেন, অনেকটা সেভাবেই গবেষণাটি করেছেন তারা।
গত মঙ্গলবার ‘বায়োলজি লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় গ্রানাটোস্কি ও তার সহকর্মীরা জানান, ছাপটি আসলে ইঁদুরের নয়, বরং কাঠবিড়ালির হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
গবেষকরা জানান, সাধারণত শিকাগোতে যে ধরনের ইঁদুর দেখা যায়, তাদের শারীরিক গঠন এবং এই ছাপের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কাঠবিড়ালির পায়ের ছাপের সঙ্গে এর মিল রয়েছে।
বিশেষ করে, কাঠবিড়ালির সামনের লম্বাটে অঙ্গ এবং পেছনের পায়ের দৈর্ঘ্য, সেইসঙ্গে পায়ের তৃতীয় আঙুলের মাপ—এসব কিছুই বাদামি ইঁদুরের চেয়ে অনেক বেশি।
শিকাগোর লিংকন পার্ক চিড়িয়াখানার আর্বান ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সেথ ম্যাগল এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও, তিনি এর পর্যালোচনা করেছেন।
তিনি মজা করে বলেন, “আমার মনে হয়, এটি আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা।” তিনি আরও জানান, সামাজিক মাধ্যমে যখন ‘ইঁদুর গর্ত’ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ছিল, তখন তারা ধারণা করেছিলেন, কোনো প্রাণী হয়তো উপর থেকে পড়েছে, যার কারণে পায়ের কোনো চিহ্ন নেই।
তবে, শিকাগো শহরের কর্তৃপক্ষ এখনো এই স্থানটিকে ‘ইঁদুর গর্ত’ নামেই ডাকতে পছন্দ করে।
তাদের মতে, শিকাগোর ইতিহাসে সিয়ার্স টাওয়ার (উইলিস টাওয়ার) বা কমেস্কি পার্কের (রেট ফিল্ড)-এর মতোই ‘ইঁদুর গর্ত’ একটি অংশ।
তবে, গবেষকরা এই স্থানটির নামকরণ ‘উইন্ডি সিটি ফুটপাথ কাঠবিড়ালি’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এই ঘটনা আমাদের নগর বাস্তুবিদ্যা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
ড. গ্রানাটোস্কি বলেন, শহরের পরিবেশে কীভাবে প্রাণী, উদ্ভিদ এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হয়, তাই হলো নগর বাস্তুবিদ্যার মূল বিষয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন