**শিকাগোতে সহিংসতা কমাতে সেনা পাঠানোর প্রস্তাব: স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ**
ঢাকা, [তারিখ] (যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অবলম্বনে) – যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগোতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা কমাতে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব উঠেছে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে এই প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
শিকাগোতে বন্দুক সহিংসতার হার অনেক বেশি, যা দেশটির অন্যান্য বড় শহরগুলোর তুলনায় উদ্বেগের কারণ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে শহরটিতে সেনা পাঠানোর প্রস্তাব আসে।
যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, কবে থেকে কত সেনা মোতায়েন করা হবে, তাদের ভূমিকা কী হবে—এসব নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
শিকাগোর মেয়র এবং ইলিনয়ের গভর্নর দুজনেই সেনা পাঠানোর বিরোধিতা করেছেন।
তাঁদের মতে, এর চেয়ে সহিংসতার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। তাঁদের মূল যুক্তি হলো, সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি সমস্যার সমাধান নয়, বরং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
শিকাগোর অনেক বাসিন্দাই মনে করেন, সেনাদের মোতায়েন করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
তাঁদের মতে, বন্দুক সহিংসতার মূল কারণগুলো হলো দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং সুযোগের অভাব। এই সমস্যাগুলো সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।
শিকাগোর বাসিন্দা ডেলফিন চেরির কথা ধরুন। ১৯৯২ সালে তাঁর কিশোরী মেয়েটি গ্যাং-এর গুলিতে নিহত হয়।
এরপর ২০১২ সালে তাঁর ছেলেও একই কারণে প্রাণ হারায়। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না, সেনাদের সেখানে পাঠিয়ে কোনো লাভ হবে।
তাঁরা তো কোনো প্রশ্ন করবে না। তাঁদের প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়েছে—যেন দেখামাত্র গুলি করতে পারে।”
আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা ট্রেভন বসলি, যিনি ২০০৬ সালে তাঁর ভাইকে হারিয়েছেন, তিনিও মনে করেন, সেনা মোতায়েন সমাধান নয়।
তিনি বলেন, “শিকাগোতে অনেক ভালোবাসার মানুষ আছে, একটা কমিউনিটি আছে, যাদের সাহায্যের প্রয়োজন। তাদের জন্য যদি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।” বসলির মতে, পুলিশ এবং ন্যাশনাল গার্ড গুলি চালানোর ঘটনার পরে আসে, কিন্তু ঘটনার আগে তারা আসে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল গার্ড সাধারণত জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের অধীনে কাজ করে। তবে ফেডারেল সরকার চাইলে তাদের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
অতীতে লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন বিষয়ক অভিযানে এবং ওয়াশিংটনে মেট্রো স্টেশন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। তবে এমন অভিযোগও উঠেছে যে, তারা পার্কের আবর্জনা পরিষ্কারের মতো কাজও করেছে।
শিকাগোর কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা চান সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরও বেশি সহায়তা আসুক।
তাঁরা মনে করেন, সেনাদের পরিবর্তে, স্থানীয় কমিউনিটিতে সহিংসতার কারণগুলো দূর করতে এবং যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে অর্থ ব্যয় করা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শিকাগোতে ২০১৯ সালে ৫৭০ জন নিহত হয়, যা প্রতি ১ লাখে ২১ জন।
যদিও ২০২০ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে, তারপরও সহিংসতা একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।
তথ্য সূত্র: