লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় ১৯৭০ এর দশকে একদল শিল্পী তাদের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে শিল্পের আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের নাম ছিল অ্যাস্কো (ASCO)। এই দলটি ছিল মূলত হিস্পানিক-মার্কিন শিল্পী, যাদের কাজ ছিল সমাজের চোখে অবহেলিত এবং নিপীড়িত একটি জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরা।
“অ্যাস্কো” শব্দের অর্থ স্প্যানিশ ভাষায় ‘বমি’ বা ‘ঘৃণা’। এই নামটিই যেন তাদের প্রতিবাদের তীব্রতা প্রকাশ করে।
অ্যাস্কো গঠিত হয়েছিল চারজন শিল্পী – পাতসি ভালদেজ, উইলি হেরন তৃতীয়, গ্রঙ্ক এবং হ্যারি গামবোয়া জুনিয়রের হাত ধরে। তারা সবাই ছিলেন তরুণ, উদ্যমী এবং নিজেদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ।
তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, শ্বেতাঙ্গ প্রধান শিল্প জগতে হিস্পানিক-মার্কিনদের প্রতি যে বঞ্চনা, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। শুধু তাই নয়, তারা পুলিশের বর্বরতা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিলেন।
ঐ সময়ে, লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্বাঞ্চলে মেক্সিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের উপর প্রায়ই পুলিশের নৃশংসতা চলত। অ্যাস্কোর শিল্পীরা তাদের প্রতিবাদকে আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন ধরনের কাজ শুরু করেন।
তারা দেয়ালচিত্র আঁকতেন, যা ছিল তাদের প্রতিবাদের এক শক্তিশালী মাধ্যম। তাদের কর্মগুলি প্রায়শই জনসমক্ষে পরিবেশিত হত, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগাত।
একবার তারা একটি সামরিক নিয়োগ অফিসের সামনে একটি বিশাল ক্রুশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদের অংশ ছিল।
অ্যাস্কোর কাজের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি কাজ ছিল “স্প্রে পেইন্ট ল্যাকমা” (Spray Paint LACMA)। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অফ আর্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর, গামবোয়া, গ্রঙ্ক এবং হেরন রাতের অন্ধকারে জাদুঘরের পাশে তাদের নাম স্প্রে করেন।
তাদের এই প্রতিবাদ ছিল, শিল্পী হিসেবে হিস্পানিক-মার্কিনদের প্রাপ্য সম্মান আদায়ের এক সাহসী পদক্ষেপ।
তাদের কাজের আরেকটি দিক ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণ। তারা “নো মুভিজ” নামে একটি সিরিজ তৈরি করেন, যেখানে হলিউডের চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়ায় তারা নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করতেন।
তাদের ব্যঙ্গাত্মক পুরস্কার অনুষ্ঠান ‘আজটলান নো মুভি অ্যাওয়ার্ডস’ ছিলো এই ধারারই একটি অংশ। এর মাধ্যমে তারা হলিউডে হিস্পানিক-মার্কিনদের প্রতিনিধিত্বের অভাবকে তুলে ধরতেন।
সম্প্রতি, তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে “অ্যাস্কো: উইদাউট পারমিশন” (ASCO: Without Permission) নামে একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে। এই তথ্যচিত্রে অ্যাস্কোর শিল্পকর্ম এবং তাদের আন্দোলনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্যচিত্রটি তাদের সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানাচ্ছে এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করছে। এই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে, অ্যাস্কোর শিল্পকর্ম আবারও আলোচনায় এসেছে।
তাদের কাজ, সমাজের চোখে প্রান্তিক একটি গোষ্ঠীর প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে আজও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের শিল্পকর্ম প্রমাণ করে, শিল্প শুধু সৌন্দর্য সৃষ্টি করে না, বরং এটি পরিবর্তনের শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস