মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরোর (Bureau of International Labor Affairs – ILAB) অধীনে বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম বন্ধে দেওয়া হতো অনুদান। কিন্তু সম্প্রতি সেই অনুদান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
জানা গেছে, এলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (Department of Government Efficiency – DOGE) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রমের বিরুদ্ধে পরিচালিত হওয়া একাধিক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আর্ন্তজাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (Associated Press) প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অনুদানগুলি মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে দেওয়া হতো।
এর মাধ্যমে শ্রমিকদের, বিশেষ করে শিশুদের, কাজের পরিবেশ উন্নত করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডগুলি মেনে চলতে সহায়তা করা হতো। গত দুই দশকে, এই ব্যুরোর সহায়তায় বিশ্বজুড়ে প্রায় সাত কোটি ৮০ লক্ষ শিশু শ্রমিককে শ্রমের জগৎ থেকে সরানো সম্ভব হয়েছিল।
অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উজবেকিস্তানের মতো দেশগুলোতে, যেখানে জোর করে শিশুদের এবং কৃষকদের দিয়ে তুলা তোলার মতো কাজ করানো হতো, সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও, মেক্সিকোতে তামাক শিল্পে শিশুশ্রম বন্ধ করতে কৃষি শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার যে প্রকল্প চলছিল, সেটিও এখন বন্ধ হওয়ার পথে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে, যেখানে ১০ বছর বয়সী শিশুদের কোকো বীজ সংগ্রহের জন্য পাঠানো হতো, সেই শিশুদের অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
শিশুশ্রম বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোটের সমন্বয়কারী রেইড মাকির মতে, “আমরা শিশুশ্রম নির্মূলের পথে ছিলাম, কিন্তু এখন এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি বিপরীত দিকে মোড় নিতে পারে।
শিশুশ্রমের বিস্তার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।”
মার্কিন শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল সরকারি ব্যয় কমানো এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে বেশি মনোযোগ দেওয়া।
তারা জানিয়েছে, এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে আরও বেশি স্বচ্ছতা আনা হবে এবং আমেরিকান শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করা হবে।
তবে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক ইউনিয়নের (AFL-CIO) আন্তর্জাতিক পরিচালক ক্যাথরিন ফিংগোল্ডের মতে, এই সিদ্ধান্ত বিশ্বে শিশু ও জোরপূর্বক শ্রমের বিস্তার ঘটাতে পারে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমন অনেক পণ্য তৈরি হতে পারে, যেখানে শিশুদের এবং জোর করে শ্রমিকদের ব্যবহার করা হবে।
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি শিশু শ্রমিক কাজ করছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ৯০ লক্ষ শিশু এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এই সিদ্ধান্তের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ও পাদুকা প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংগঠনগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তারা মনে করে, আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরো ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী, যারা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করত।
অন্যদিকে, মার্কিন শ্রম দপ্তরের কর্মীরাও ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় রয়েছেন। জানা গেছে, বেশ কয়েকটি দপ্তরের কর্মীদের হয় পদত্যাগ করতে অথবা স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বলা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস