যুক্তরাষ্ট্রে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের উচ্চ খরচ: একটি উদ্বেগের চিত্র
যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্রের ক্রমবর্ধমান খরচ এখন একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশটির অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই এই সমস্যাটিকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে মনে করেন।
এই পরিস্থিতিতে, বিনামূল্যে অথবা স্বল্প খরচে দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং কর্মীদের জন্য বেতনসহ পারিবারিক ছুটির ব্যবস্থা করার মতো পদক্ষেপের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় এবং সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
এপি-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের জুন মাসের জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৭৫ শতাংশ মার্কিন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের খরচকে একটি ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে দেখেন। যদিও তাদের মধ্যে অর্ধেকের কিছু বেশি মনে করেন, ফেডারেল সরকারের জন্য কর্মজীবী পরিবারগুলোকে শিশু দিবাযত্নের খরচ দিতে সহায়তা করাটা একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার’ হওয়া উচিত।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সমস্যা সমাধানে সুস্পষ্ট কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি অর্থায়নে দিবাযত্ন কেন্দ্র জনপ্রিয় হলেও, সবার প্রথম পছন্দ নাও হতে পারে। অনেক মার্কিনি মনে করেন, শিশুদের জন্য বাবা-মায়ের মধ্যে একজন সবসময় তাদের দেখাশোনা করলে ভালো হয়।
শিশু দিবাযত্নের উচ্চ খরচ কমাতে সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে কিছু করছাড়ের প্রস্তাব আনা হয়েছে, যা কর্মীদের জন্য শিশু দিবাযত্নের সুবিধা প্রদানকারী পরিবার এবং ব্যবসার জন্য প্রযোজ্য। এই পরিবর্তনগুলোর কেউ কেউ প্রশংসা করলেও, অনেকে মনে করেন, কম আয়ের পরিবারের জন্য এই সুবিধাগুলো পর্যাপ্ত হবে না এবং এর ফলে মেডিকেড [যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচি] ও খাদ্য স্ট্যাম্পের মতো সামাজিক সুরক্ষা খাতে কাটছাঁট হতে পারে।
টেক্সাসের মিডলোথিয়ানের নার্স এনেসথেটিস্ট মেরি বানেক জানান, তিনি তার এক বছর বয়সী নাতীর দেখাশোনা করেন, যাতে তাকে দিবাযত্ন কেন্দ্রে পাঠাতে না হয়। তিনি যখন সন্তান জন্ম দেন, তখন কর্মজীবন থেকে বিরতি নিয়ে নিজের বাড়িতে দিবাযত্ন কেন্দ্র খুলেছিলেন, যেখানে তিনি নিজের সন্তানদের সহ মোট ১২ জন শিশুর দেখাশোনা করতেন।
মেরি বলেন, বর্তমানে দিবাযতত্ব কেন্দ্রের উচ্চ খরচ দেখে তিনি অবাক হন।
এদিকে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শিশুদের ভালো রাখার জন্য বাবা-মায়ের মধ্যে একজনের সবসময় তাদের সঙ্গে থাকাটা জরুরি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, শিশুদের জন্য বাবা-মায়ের মধ্যে একজন কর্মহীন হয়ে তাদের দেখাশোনা করলে ভালো হয়।
অন্যদিকে, মাত্র ১০ শতাংশ মনে করেন, উভয় অভিভাবক পূর্ণকালীন কাজ করলে শিশুদের ভালো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স এমন কিছু ধারণার পক্ষে কথা বলেছেন, যা মার্কিনিদের পরিবার গঠনে উৎসাহিত করবে, তবে তিনি শিশু দিবাযত্নের জন্য সরকারি ব্যয়ের বিরোধিতা করেছেন। তার মতে, শিশুদের জন্য পরিবারের কোনো সদস্যের তত্ত্বাবধানে থাকাটা বেশি উপকারী।
শিশুদের জন্য অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি ও ধারণা প্রচলিত রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও শিশুদের প্রতি পরিবারের সদস্যদের বিশেষ যত্ন এবং দিবাযত্নের ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা করার প্রবণতা দেখা যায়।
শিশুদের সাহায্য করার জন্য করছাড়ের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে। সম্প্রতি, অভিভাবকদের জন্য শিশু করছাড়ের পরিমাণ ২,০০০ ডলার থেকে ২,২০০ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, যা প্রায় ২৪০,০০০ বাংলাদেশী টাকার সমান)।
যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্র বিষয়ক এই আলোচনা প্রমাণ করে যে, উন্নত বিশ্বে শিশুদের কল্যাণে পরিবার ও সরকারের মধ্যে একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস