ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে: চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

চিলির একটি কুখ্যাত ভেনেজুয়েলীয় গ্যাং, যাদের মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই গ্যাংটির সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে তদন্তকারীরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন।

জানা গেছে, এই গ্যাংটি একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিশানায় ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাদক পাচার, মানব পাচার, চাঁদাবাজি এবং নৃশংস সহিংসতা।

আফ্রিকা মহাদেশের দেশ চিলিতে এই গ্যাংয়ের কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে আরিকা শহরে গ্যাংটির দৌরাত্ম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

সেখানকার পুলিশি অভিযানে গ্যাং সদস্যদের কাছ থেকে তাদের হিসাবনিকাশের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে, যা কার্যত একটি বহুজাতিক কোম্পানির হিসাবের মতোই। এই হিসাবের মাধ্যমে তাদের অর্থ লেনদেন, অপরাধের পরিকল্পনা এবং সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের ধরন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

আরিকাতে ২০২১ সালে ‘ট্রেন দে আরাগ‌ুয়া’ গ্যাংয়ের আগমন ঘটে। মূলত ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট ও সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানকার লোকজন প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালাতে শুরু করে।

তখন এই গ্যাং মানব পাচারের ব্যবসা শুরু করে এবং দ্রুত তাদের জাল বিস্তার করে। তারা আশ্রয় নেয় আরিকার একটি বস্তিতে, যেখানে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীরা অত্যন্ত খারাপ পরিবেশে বসবাস করে।

গ্যাং সদস্যরা সেখানকার দোকান মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত এবং যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করত, তাদের ওপর চালাত বর্বর নির্যাতন। এমনকি বিরোধীদের তারা বন্দী করে নির্যাতন করত এবং তাদের অত্যাচারের দৃশ্য ভিডিও করত।

চিলির প্রসিকিউটর ব্রুনো হার্নান্দেজ এবং তার দল এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। তাদের অনুসন্ধানে গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে কঠোর গোপনীয়তা এবং সুসংগঠিত একটি কাঠামো খুঁজে পাওয়া যায়।

এমনকি তাদের সদস্যদের বেতন কাঠামোও ছিল সুনির্দিষ্ট। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাসিক বেতন ছিল ১,২০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার সমান। অন্যদিকে, হিটম্যানরা প্রতি কাজের জন্য ১,০০০ ডলার পেত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লক্ষ টাকার বেশি।

তবে, গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিবাসন নীতিকে কঠোর করার কথা বলেছিলেন।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

আরিকাতে গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলস্বরূপ, খুনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ২০২২ সালে যেখানে প্রতি ১ লাখে ১৭ জন খুন হতো, সেখানে বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯.৯ জনে।

বর্তমানে হার্নান্দেজের দল গ্যাং সদস্যদের জেল থেকে তাদের কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে চিলির জনগণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থী প্রার্থী হোসে আন্তোনিও কাস্ট গ্যাং দমনের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *