চীনের ‘দীর্ঘতম’ ফ্লাইট: যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে বিশাল এক ফাঁদ!

বিশ্বের দীর্ঘতম ‘সরাসরি’ বিমানযাত্রা: সাংহাই থেকে বুয়েনস আইরেস, কিন্তু আছে একটি ‘কিন্তু’।

চীনের একটি বিমান সংস্থা, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, সাংহাই থেকে বুয়েনস আইরেস পর্যন্ত একটি নতুন বিমান পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে। তারা এটিকে ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সরাসরি বিমানযাত্রা’ হিসেবে বর্ণনা করছে।

তবে, এই দীর্ঘ ভ্রমণের মাঝে রয়েছে একটি ‘ছোট্ট বিরতি’। আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

বিমান সংস্থাটি জানাচ্ছে, সাংহাইয়ের পুডং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (PVG) থেকে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের মিনিস্ট্রো পিস্তারিনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (EZE) পৌঁছাতে প্রায় ২৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগবে।

অন্যদিকে, ফেরার পথে এই যাত্রাটি ২৯ ঘণ্টা পর্যন্ত গড়াতে পারে।

তবে, যাত্রাপথে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে (Auckland) দুই ঘণ্টার একটি বিরতি থাকবে। যেখানে যাত্রীরা প্লেন থেকে নেমে বিশ্রাম নিতে পারবেন।

তাই, এটিকে ‘সরাসরি’ বলা হলেও, এটি আসলে ‘ননস্টপ’ (nonstop) ফ্লাইট নয়।

দীর্ঘতম রুটের দাবি নিয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মধ্যে প্রায়ই প্রতিযোগিতা দেখা যায়।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের দখলে। তাদের সিঙ্গাপুর থেকে নিউ ইয়র্ক (JFK) পর্যন্ত একটি ননস্টপ ফ্লাইট রয়েছে, যা ১৫,৩৪১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এবং এতে সময় লাগে ১৮ ঘণ্টার বেশি।

চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স বলছে, তাদের এই ফ্লাইটটি হবে ‘দুটি বিপরীত মেরুর শহরের মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিক রুট’। তারা একটি বিশেষ রুটের পরিকল্পনা করেছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী কিছু জলভাগের ওপর দিয়ে যাবে এবং অ্যান্টার্কটিকার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে যাবে।

তাদের দাবি, এর ফলে ভ্রমণের সময় অন্তত চার ঘণ্টা বাঁচানো সম্ভব হবে।

জানা গেছে, বোয়িং ৭৭৭-300 মডেলের একটি বিশাল বিমান ব্যবহার করে আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে দু’বার এই রুটে ফ্লাইট চলাচল করবে।

চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের মতে, এই নতুন রুটটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে একটি নতুন ‘এয়ার সিল্ক রোড’ তৈরি করবে।

বর্তমানে, স্কাইস্ক্যানার-এর তথ্য অনুযায়ী, এয়ার ফ্রান্স এবং লুফথানসার মতো এয়ারলাইন্সগুলো সাংহাই থেকে বুয়েনস আইরেস পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে, যেখানে প্যারিস অথবা আমস্টারডামে যাত্রাবিরতি সহ প্রায় ৩১ ঘণ্টা সময় লাগে।

তবে, ফেরার পথে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলো ২৮ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় থেকে ৩৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নেয়।

দীর্ঘতম ফ্লাইটের দৌড়ে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোর বেশ ভালোই প্রতিযোগিতা হবে।

তবে, অনেক বিমানযাত্রীর কাছেই কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোই প্রধান বিষয়।

এই প্রসঙ্গে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বিমান সংস্থা, কান্তাস (Qantas), ‘প্রজেক্ট সানরাইজ’ নামে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। যার লক্ষ্য হলো, দীর্ঘ ভ্রমণের সময় যাত্রীদের ঘুমের ধরনে সুবিধা তৈরি করা।

তারা সিডনি থেকে লন্ডন পর্যন্ত একটানা ফ্লাইট চালু করার চেষ্টা করছে, যা প্রায় ১০,০০০ মাইল দূরের পথ।

এই দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধারণাটি আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা কাজের সূত্রে বা অন্য কোনো কারণে নিয়মিত দীর্ঘ পথে ভ্রমণ করেন।

অনেক সময়, প্রবাসী শ্রমিকদের দীর্ঘ ফ্লাইটে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই ধরনের নতুন রুটগুলো ভবিষ্যতে ভ্রমণকারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *