চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তি ব্যাপক নজরদারির প্রস্তাব তৈরিতে সাহায্য করার জন্য ChatGPT ব্যবহার করেছেন। এই তথ্য জানিয়েছে ChatGPT প্রস্তুতকারক সংস্থা OpenAI।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা জানায়, সম্ভবত চীনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই কাজটি করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ChatGPT ব্যবহার করে এমন একটি প্রস্তাব তৈরি করতে সহায়তা চাওয়া হয়েছিল, যা উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষের গতিবিধি এবং পুলিশের রেকর্ড বিশ্লেষণ করতে পারবে। এছাড়াও, সামাজিক মাধ্যমে ‘চরমপন্থী’ মন্তব্য খুঁজে বের করার জন্য আরেকটি সরঞ্জাম তৈরি করতেও নাকি ChatGPT-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
OpenAI সতর্ক করে বলেছে, অত্যাধুনিক এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (AI) ব্যবহার করে কীভাবে নিপীড়ন আরও কার্যকর করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।
তারা একে ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের দ্বারা AI-এর অপব্যবহারের বিরল চিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে AI প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতা চলছে, যেখানে উভয় দেশই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। তবে, এই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, AI-কে ব্যবহার করা হচ্ছে জটিল কোনো প্রযুক্তিগত সাফল্যের বদলে বরং সাধারণ কাজগুলোর জন্য, যেমন ডেটা বিশ্লেষণ অথবা ভাষার মান উন্নত করা।
OpenAI-এর প্রধান তদন্তকারী বেন নিমো সিএনএনকে জানান, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণের মতো বৃহৎ পরিসরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
তারা সম্ভবত এটিকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে চাইছে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীনা ভাষায় কথা বলা একজন ব্যবহারকারী ChatGPT-কে একটি সরঞ্জামের প্রচারমূলক উপকরণ তৈরি করতে সাহায্য করতে বলেছিলেন। এই সরঞ্জামটি X (সাবেক টুইটার) এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়বস্তু স্ক্যান করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
OpenAI এই দুই ব্যবহারকারীকেই নিষিদ্ধ করেছে।
AI প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। জানুয়ারিতে চীনের DeepSeek নামক একটি সংস্থা ChatGPT-এর মতো R1 নামে একটি AI মডেল উপস্থাপন করে, যা ওপেনএআই-এর মডেলের চেয়ে অনেক কম খরচে কাজ করতে পারে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গুয়ু এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “আমরা চীনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন আক্রমণ ও অপবাদের বিরোধিতা করি।” তিনি আরও যোগ করেন, চীন একটি “নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ AI শাসন ব্যবস্থা” তৈরি করছে, যেখানে উন্নয়নের সঙ্গে নিরাপত্তার ভারসাম্য বজায় রাখা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত এবং অপরাধী হ্যাকাররা তাদের বিভিন্ন কাজে ChatGPT ব্যবহার করছে।
রাশিয়ার, উত্তর কোরিয়া এবং চীনের সন্দেহভাজন হ্যাকাররা তাদের কোডিং উন্নত করতে বা ফিশিং লিঙ্কগুলিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করতে ChatGPT ব্যবহার করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, চীনা এবং রাশিয়ান হ্যাকাররা সামাজিক মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রায়ই ভাষার সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে AI ব্যবহার করে।
OpenAI-এর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মাইকেল ফ্লসম্যান বলেন, “প্রতিপক্ষরা সাইবার হামলার নতুন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কারের পরিবর্তে বিদ্যমান কৌশলগুলো উন্নত করতে AI ব্যবহার করছে।”
অন্যদিকে, মিয়ানমারের কিছু স্ক্যামার আর্থিক হিসাব পরিচালনা করা থেকে শুরু করে অনলাইন প্রতারণার জন্য শাস্তিমূলক বিধি অনুসন্ধান করার মতো বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে OpenAI-এর মডেল ব্যবহার করেছে।
তবে, প্রতারণার শিকার হতে যাওয়া অনেক মানুষও এখন ChatGPT ব্যবহার করে প্রতারণা শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
OpenAI-এর অনুমান, ChatGPT প্রতারণার কাজে ব্যবহারের চেয়ে তা শনাক্ত করতে তিনগুণ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হ্যাকিং অপারেশনের জন্য ChatGPT ব্যবহার করছে কিনা জানতে চাইলে, OpenAI সরাসরি কোনো উত্তর দেয়নি।
তারা জানায়, তারা AI-কে গণতন্ত্রের সমর্থনে ব্যবহারের নীতি অনুসরণ করে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন