চীনের সৌর বিপ্লব: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে আমেরিকার কপাল পুড়ছে?

শিরোনাম: পরিচ্ছন্ন শক্তির দৌড়ে চীন অনেক এগিয়ে, আমেরিকার নীতিতে ভাটা – বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য

বৈশ্বিক পরিচ্ছন্ন শক্তির বাজারে চীন একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, আমেরিকার নীতিগত কিছু পরিবর্তনের কারণে তারা যেন ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের জন্যেও এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, এটি আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে।

গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, চীন ইতিমধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট (এক হাজার মিলিয়ন ওয়াট) সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এর আগে তারা ১,৪০০ গিগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতার পাঁচ গুণেরও বেশি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কমানোর ফলে এই খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়বে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়বে।

উদাহরণস্বরূপ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে গ্যাসের দাম বেশি হওয়ায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান নতুন করে বিনিয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে, চীনের এই বিশাল বিনিয়োগের কারণ হলো তারা দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার আগে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে চাইছে। দেশটির শহরগুলোতে, বিশেষ করে রাজধানী বেইজিংয়ে, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তারা ব্যাপক হারে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার করছে।

এখানেকার ট্যাক্সি ও রাইড শেয়ারিং চালকদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে, যা তাদের জ্বালানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এই পদক্ষেপের ফলে তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। তবে, চীনের বিদ্যুৎ খাতে কয়লার ব্যবহার কমানো এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর বিধিনিষেধের কারণে সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তথ্যকেন্দ্র (data center) এবং বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পর্যাপ্ত বিদ্যুতের অভাব দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়গুলো বিবেচনা করি, তাহলে দেখব, চীন যদি পরিচ্ছন্ন শক্তির বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে, তবে সেখান থেকে আমরা প্রযুক্তি, সরঞ্জাম এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারি। চীনের সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটাতে সহায়ক হবে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর তাদের নির্ভরতা বাড়লে, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামের তারতম্য দেখা দিতে পারে, যা আমাদের আমদানি খরচকে প্রভাবিত করতে পারে।

সুতরাং, বিশ্ব পরিচ্ছন্ন শক্তির বাজারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই নিয়ে এসেছে। আমাদের প্রয়োজন, দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *