চিনের হাতে ‘সোনার খনি’! বাণিজ্যে আমেরিকার কপালে চিন্তার ভাঁজ?

চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ, বাণিজ্য আলোচনায় বেইজিংয়ের প্রধান হাতিয়ার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের আধিপত্য একটি শক্তিশালী দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

বেইজিং এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে হওয়া আলোচনায় উভয় পক্ষ একটি চুক্তির কাঠামো তৈরিতে সম্মত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, চীনের এই খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

চীন কয়েক দশক ধরে এই ধরনের খনিজ পদার্থ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিশ্বের প্রধান শিল্প ভিত্তি তৈরি করেছে। এই খনিজগুলো ইলেকট্রনিক্স, উন্নত উৎপাদন, প্রতিরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

চীনের অভ্যন্তরে খনিজ আহরণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো গানঝাউ। এখানকার খনি ও কারখানাগুলো বিরল মৃত্তিকা সহ মূল্যবান খনিজগুলির উৎপাদনে চীনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়ক।

স্থানীয় বাসিন্দারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাহাড় থেকে মূল্যবান খনিজ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপটে, চীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা এবং অন্যান্য খনিজ রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

যদিও বিস্তারিত এখনো অজানা, তবে ধারণা করা হচ্ছে উভয় দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সম্ভবত মূল্যবান সম্পদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পারমিট ব্যবস্থা বাতিল করবে না। তারা মনে করেন, চীন ইতিমধ্যে বিরল মৃত্তিকাগুলির জন্য একটি সম্পূর্ণ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারে।

চীনের এই খনিজ সম্পদের আধিপত্যের পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের কঠোর পরিশ্রম ও বিনিয়োগ। ১৯৯২ সালে চীনের তৎকালীন নেতা দেং জিয়াওপিং বলেছিলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের তেল আছে, চীনের আছে বিরল মৃত্তিকা।”

এর মাধ্যমে তিনি এই খনিজ সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। চীন বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ টাংস্টেন, গ্যালিয়াম ও অ্যান্টিমনি এবং ৬০ শতাংশ জার্মেনিয়াম উৎপাদন করে।

এই খনিজগুলো সেমিকন্ডাক্টরসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

চীনের খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা প্রথম নজরে আসে ২০১০ সালে, যখন একটি আঞ্চলিক বিরোধের কারণে চীন জাপানে বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

এর ফলস্বরূপ, জাপান অন্যান্য দেশে বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন এবং এই উপাদানগুলি মজুদ করতে শুরু করে।

বর্তমানে, চীনের রপ্তানি লাইসেন্স ব্যবস্থার কারণে বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিক্স প্রস্তুতকারক এবং গাড়ি নির্মাতাদের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপের কিছু স্বয়ংচালিত যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক সরবরাহ বিলম্বের কারণে তাদের উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

তবে, চীনের খনিজ সম্পদের মজুদও ধীরে ধীরে কমছে। গানঝাউয়ের খনি শ্রমিক এবং ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

কারণ, খনিজ সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় ছোট ছোট খনি ও বাণিজ্য সংস্থাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। তারা স্থানীয় খনিগুলোতে বিনিয়োগ করছে এবং প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা তৈরি করতে চাইছে।

তবে, চীনের মতো একটি সম্পূর্ণ শিল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশক সময় লাগতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, ছোট খনি কোম্পানিগুলোর জন্য কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা “নিশ” খনিজ যেমন টাংস্টেন উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগ করতে পারে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অবলম্বনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *