যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগবে বলে মনে করছে বেইজিং।
একই সঙ্গে, হংকং-এর একটি বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রস্তাব দিয়েছে।
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ তাদের নিজেদের ভাবমূর্তির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্মানকেও ক্ষুণ্ণ করবে।” তিনি আরও জানান, চীন বিদেশে থাকা চীনা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তবে, কীভাবে এই সুরক্ষা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশেষ করে চীনা শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬,৭0৩ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল, যাদের মধ্যে ১,২০০ জনের বেশি ছিল চীন থেকে আগত।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি’র খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে অবস্থান ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে।
সিসিটিভি’র ভাষ্যমতে, “দীর্ঘ সময় ধরে চলা মামলার কারণে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হয়তো উদ্বেগে রয়েছে।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা উভয় দেশের জন্যই উপকারী। আমরা এর রাজনৈতিকীকরণ সমর্থন করি না।”
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (HKUST) হার্ভার্ডের বর্তমান ও নতুন ভর্তি হওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এক বিবৃতিতে জানায়, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য শর্তহীন অফার, সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া এবং অ্যাকাডেমিক সহায়তা প্রদান করবে, যাতে তারা নির্বিঘ্নে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে মজা করে মন্তব্য করেছেন যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘হারবিন’ শহরে (যে শহরের নামের সঙ্গে হার্ভার্ডের চীনা নামের মিল রয়েছে) যেন একটি শাখা খোলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। ট্রাম্পের শাসনামলে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাখ্যান এবং ভিসার মেয়াদ কমানো নিয়ে সতর্ক করেছিল।
গত বছর, চীন সরকার অভিযোগ করে যে, মার্কিন বিমানবন্দরে অনেক চীনা শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে এবং আমেরিকাকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিত্রিত করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক চীনা শিক্ষার্থী এখন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যুক্তরাজ্য বা অন্যান্য দেশে পড়াশোনা করার কথা ভাবছেন।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস