বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বাজারে চীন এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। সাংহাই অটো শো’তে (Shanghai Auto Show) তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে চীন ছিল পশ্চাৎপদ, সেখানে এখন তারা উদ্ভাবনে বিশ্বকে তাক লাগাচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিবর্তনের ঢেউ কি বাংলাদেশের জন্য কোনো সম্ভাবনা নিয়ে আসছে?
চীনের এই সাফল্যের মূল কারণ হলো তাদের সরকার ও উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তারা শুধু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরি করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তা সাধারণ মানুষের নাগালে এনেছে।
উদাহরণস্বরূপ, BYD-এর মতো কোম্পানিগুলো স্বল্প মূল্যে অত্যাধুনিক সব ফিচার নিয়ে আসছে, যা চীনের বাজারে তাদের বিক্রি বাড়িয়েছে। এমনকি তারা এখন টেসলার (Tesla) চেয়েও বেশি গাড়ি বিক্রি করছে।
চীনের এই উত্থান বাণিজ্য যুদ্ধের মাঝে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনের গাড়ির ওপর শুল্ক বসাচ্ছে, তখন চীন অন্যান্য বাজারের দিকে ঝুঁকছে। এই পরিস্থিতিতে চীনের ইভি-র (EV) উত্থান দেশটির জন্য এক দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে যেমন তারা বিশ্ব বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিতে নিজেদের স্থান আরও সুসংহত করতে পারবে, তেমনি অন্য দেশগুলোতেও তাদের প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
চীনের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও বিনিয়োগ। তারা একদিকে যেমন ভর্তুকি দিয়েছে, তেমনি চার্জিং অবকাঠামো তৈরিতেও মনোযোগ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, BYD সম্প্রতি এমন একটি ব্যাটারি তৈরি করেছে যা মাত্র পাঁচ মিনিটে ২৫০ মাইল পর্যন্ত চলতে পারে।
তবে চীনের এই বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। অনেক কোম্পানি টিকে থাকার জন্য লড়ছে। তাদের টিকে থাকার জন্য এখন রপ্তানির দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে, কারণ অভ্যন্তরীণ বাজারে জায়গা করে নেওয়া বেশ কঠিন।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ চীনের ইভি-র ওপর শুল্ক আরোপ করছে। কিন্তু চীন সেসব বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তারা আগের বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি ইভি রপ্তানি করেছে।
তাহলে বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কী? চীন যদি তাদের এই সস্তা ও উন্নত প্রযুক্তির ধারা অব্যাহত রাখতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে, আমাদের দেশে গাড়ির বাজার মূলত আমদানি নির্ভর।
চীনের ইভিগুলো যদি আমাদের বাজারে আসে, তাহলে তা গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ তৈরি করতে পারে। একইসাথে, এটি পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে।
তবে, এক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চীনের এই বিশাল বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে, আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। চার্জিং স্টেশন স্থাপন, সরকারি প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের সুফল নিশ্চিত করা যেতে পারে।
চীনের এই সাফল্যের গল্প আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। আমরা যদি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে পারি, তাহলে বৈদ্যুতিক গাড়ির এই বিশ্বজোড়া বিপ্লবে বাংলাদেশেরও অংশীদার হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন