আতঙ্কে চীন! ইভি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ!

চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে অস্থিরতা, সরকারের হস্তক্ষেপ

চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎপর হয়েছে দেশটির সরকার। বাজারে টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলা অসম প্রতিযোগিতার (ইনভোলিউশন) অবসান ঘটাতে চাইছে তারা।

বর্তমানে, বিশ্বের বৃহত্তম এই গাড়ির বাজারে চাহিদা আকাশছোঁয়া হলেও, অতিরিক্ত সরবরাহ এবং দাম কমার কারণে অনেক কোম্পানিই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

চীনের বাজারে ইভি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হলো বিওয়াইডি (BYD)। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের বিক্রি ৩১ শতাংশ বেড়ে ২.১ মিলিয়ন হয়েছে।

এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছিল সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাকিগুলো ছিল প্লাগ-ইন হাইব্রিড। জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে কোম্পানিটি পেট্রোল-ডিজেল ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

মে মাসের শেষের দিকে, বিওয়াইডি তাদের গাড়ির দাম কমালে অন্যান্য কোম্পানিগুলোও একই পথে হাঁটা শুরু করে। এরপর গ্রেট ওয়াল মোটরসের চেয়ারম্যান ওয়েই জিয়ানজুন সতর্ক করে বলেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো শিল্পখাত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

তিনি চীনের একটি বৃহৎ রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এভারগ্রান্ডের উদাহরণ টেনে বলেন, গাড়ির বাজারেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিওয়াইডি’র এই আগ্রাসী মূল্য নির্ধারণের কারণে অনেক কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে যখন চীনের বাজারে টিকে থাকার লড়াই চলছে, তখন লাভের আশায় প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বাইরের দেশে বাজার তৈরির চেষ্টা করছে।

বিওয়াইডি’র বিদেশি বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে, যা এই বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪,৬৪,০০০ ইউনিটে পৌঁছেছে।

এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলো চীন থেকে আমদানি করা ইভি’র ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। তাদের অভিযোগ, চীনা কোম্পানিগুলো ভর্তুকি পাওয়ার কারণে বাজারে একচেটিয়া সুবিধা পাচ্ছে।

বিষয়টি নজরে আসার পর, চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গাড়ির বাজারে “ইনভোলিউশন”-এর মতো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে, চীন অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনও (China Association of Automobile Manufacturers) বাজারের সুস্থ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, ১৭টি গাড় প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের সরবরাহকারীদেরকে ৬০ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো পাওনা পরিশোধের এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত সরকারের চাপেরই ফল।

এর মাধ্যমে এভারগ্রান্ডের মতো পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে, যেখানে সরবরাহকারীরা তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের এই পদক্ষেপগুলো বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং গাড়ির দাম কমানোর প্রবণতা রোধ করতে সহায়ক হবে। তবে এর ফলস্বরূপ আগামী মাসগুলোতে ইভি’র চাহিদা কেমন থাকে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *