মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির কারণে চীন থেকে রপ্তানি কমে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এপ্রিল মাসে চীনের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় নেওয়া শুল্ক নীতির ফলস্বরূপ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ, চীন এবং আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
চীনের শুল্ক বিভাগ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৮.১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মার্চ মাসে এই হার ছিল ১২.৪ শতাংশ। মূলত, উচ্চ শুল্ক আরোপের আগে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, ফলে মার্চ মাসের প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল।
এপ্রিল মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি ২.৫ শতাংশ কমেছে, এবং একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে আমদানিও কমেছে ৪.৭ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলো বাণিজ্য যুদ্ধের গভীর প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়, যা চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এরই মধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে চীনের কারখানার উৎপাদন ১৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিং নতুন অর্থনৈতিক উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। একই সময়ে, মার্কিন অর্থনীতিও প্রথম প্রান্তিকে মন্দার সম্মুখীন হয়েছে, যা গত তিন বছরে প্রথম। মূলত, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করতে শুরু করায় এমনটা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি এবং চীনের কর্মকর্তাদের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ কমানোর জন্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, এবং চীনও এর জবাবে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন থেকে আসা জাহাজগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে পৌঁছানোর পরে শুল্কের আওতায় পড়ছে।
এর ফলে, খুব শীঘ্রই ভোক্তারা পণ্যের উচ্চ মূল্য এবং কিছু পণ্যের ঘাটতির সম্মুখীন হতে পারে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, যিনি জেনেভার বৈঠকে অংশ নেবেন, তিনি একটি সমঝোতার সম্ভাবনাকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন, তবে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করার আশা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হংকংয়ের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জিমি লাইয়ের বিষয়টি আলোচনার অংশ হিসেবে উত্থাপন করতে পারেন বলে জানা গেছে। জিমি লাই, যিনি একসময় ‘অ্যাপল ডেইলি’ নামে একটি পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন এবং চীনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বর্তমানে একটি জাতীয় নিরাপত্তা মামলার সম্মুখীন। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার এই বাণিজ্য বিরোধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, চীন থেকে আমদানি করা কাঁচামাল বা পণ্যের দাম বেড়ে গেলে, তা বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে এবং স্থানীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়তে পারে। একইসাথে, যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও সুবিধা পেতে পারেন, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হন।
তাই, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটোই নিয়ে আসতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন