চীনের আকাশে উড়ন্ত গাড়ির মহড়া, দুর্ঘটনায় আহত ১।
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি বিমান প্রদর্শনী আয়োজনের প্রস্তুতি পর্বে দুটি উড়ন্ত গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার, চীনের জিলিন প্রদেশের চাংচুন শহরে এই দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে আগামী শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনের এই বিমান প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জানা গেছে, উড়ন্ত গাড়িগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ছিল। এই কারণে একটি গাড়ির পাইলট সামান্য আহত হন এবং একটি গাড়ি মাটিতে অবতরণের সময় আগুন ধরে যায়। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাড়ির পেছন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হচ্ছে, এবং দমকল ও অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে।
উড়ন্ত গাড়িগুলো তৈরি করেছে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি Xpeng-এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, Xpeng Aeroht। কোম্পানি সূত্রে জানানো হয়েছে, সংঘর্ষের কারণে গাড়ির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটিতে আগুন ধরে যায়। তবে, ঘটনার সাথে জড়িত সকল কর্মী নিরাপদে আছেন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এই ঘটনার পর চীনে ‘নিম্ন-অক্ষাংশ অর্থনীতি’ (low-altitude economy) নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই অর্থনীতির মূল ধারণা হলো উড়ন্ত ট্যাক্সি, ড্রোন পরিষেবা এবং ৩,০০০ মিটারের কম উচ্চতার আকাশপথে অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
গত বছর চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের বার্ষিক সরকারি প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো ‘নিম্ন-অক্ষাংশ অর্থনীতি’র কথা উল্লেখ করে। ধারণা করা হচ্ছে, এই খাতটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অনুমান করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই বাজারের আকার প্রায় ২০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে (প্রায় ২২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি) পৌঁছাতে পারে এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৪৮২ বিলিয়ন ডলারে (প্রায় ৫২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি) দাঁড়াতে পারে।
Xpeng Aeroht-এর মতো প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো এই বাজারে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাইছে। তারা পর্যটন, লজিস্টিকস, কৃষি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন খাতে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আগ্রহী। Xpeng Aeroht তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদের এশিয়ার বৃহত্তম উড়ন্ত গাড়ি প্রস্তুতকারক হিসেবে দাবি করে।
অন্যদিকে, চীনজুড়ে বিভিন্ন শহরে ইতিমধ্যে পার্সেল, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহের জন্য মনুষ্যবিহীন ড্রোন ব্যবহারের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত চীনে ২,০০০-এর বেশি ড্রোন প্রস্তুতকারক এবং ২০,০০০-এর বেশি মনুষ্যবিহীন বিমান পরিচালনাকারী সংস্থা ছিল।
উড়ন্ত গাড়ির এই দুর্ঘটনা প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথে কিছু চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। তবে, চীন সরকার এই খাতে বিশাল বিনিয়োগ করে চলেছে এবং ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, উন্নত বিশ্বের এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। ভবিষ্যতে হয়তো যানজট নিরসনে উড়ন্ত ট্যাক্সি অথবা জরুরি পণ্য পরিবহনে ড্রোন ব্যবহারের বিষয়টি আমাদের দেশেও গুরুত্ব পেতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN