মার্কিন পণ্যে চীনের চরম আঘাত: বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র!

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: পাল্টা জবাব, নতুন শুল্ক এবং বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ

চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সকল পণ্য আমদানির ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা আগামী ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

এই পদক্ষেপটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা শুল্ক’-এর সরাসরি জবাব, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও চীনের রফতানির ওপর একই হারে শুল্ক আরোপ করেছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত বিরল মৃত্তিকা ধাতু (rare earths) রপ্তানির ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। এর মধ্যে রয়েছে স্যামারিয়াম এবং গ্যাডোলিনিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ, যা মহাকাশ গবেষণা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়াও, চীন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু চিকেন সরবরাহকারীর কাছ থেকে মুরগি আমদানি স্থগিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই সরবরাহকারীরা এমন কিছু ঔষধ ব্যবহার করেছে যা চীনে নিষিদ্ধ।

বাণিজ্য বিরোধের পাশাপাশি, চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (World Trade Organization – WTO) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

তারা এটিকে একতরফা বাণিজ্য আগ্রাসন হিসেবেও বর্ণনা করেছে।

শুধু তাই নয়, চীন বহুজাতিক রাসায়নিক সংস্থা ডু পন্ট চায়না গ্রুপ কোং-এর বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার তদন্ত শুরু করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে আমদানিকৃত সিটি স্ক্যানারের জন্য ব্যবহৃত এক্স-রে টিউবের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়লা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বড় ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। এর সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, চীন যদি মার্কিন পণ্য আমদানি কমিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ থেকে তাদের আমদানি বাড়াতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। আবার, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেও, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি, মার্কিন ও চীনা সামরিক কর্মকর্তারা প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন, যেখানে সমুদ্রপথে নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। তবে, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিবেচনা করে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *