ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: দৃশ্যপটে চীনের নীরবতা, বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য।
সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইসরায়েল একের পর এক হামলা চালাচ্ছে, তখন চীন যেন অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন চীন সরাসরি কোনো পক্ষ না নিয়ে এই সংঘাত এড়িয়ে যাচ্ছে? এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য এর কী তাৎপর্য, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
চীনের পররাষ্ট্রনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। তারা সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দেয়।
ইরান চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। তাদের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। চীন ইরানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করে, যা তাদের অর্থনীতির জন্য খুবই জরুরি।
কিন্তু ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়ি য়ে পড়লে চীনের বাণিজ্যিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, কারণ এই অঞ্চলের অস্থিরতা তাদের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর মতো বৃহৎ প্রকল্পের সফলতার জন্যও এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তাছাড়াও, চীন চায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের একটি শক্তিশালী এবং দায়িত্বশীল শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতো আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তাই, কোনো সামরিক সংঘাতে সরাসরি জড়ি য়ে না গিয়ে তারা নিজেদের একটি আলাদা ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাইছে।
ইরানের পক্ষ থেকে তাদের মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি সমর্থন আশা করা হয়েছিল, বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে। কিন্তু বাস্তবে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত এবং চীনও সরাসরি কোনো সামরিক সহায়তা দিতে রাজি হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন এক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে, কারণ তারা কোনো পক্ষের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।
- প্রথমত, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
- মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
- দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সতর্কভাবে বিবেচনা করতে হবে।
- কোনো দেশের প্রতি অতি নির্ভরশীলতা বা পক্ষপাতের কারণে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।
- তৃতীয়ত, বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, তবে দেশের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে।
চীন বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের উচিত, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে নিজেদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা।
একই সঙ্গে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত করতে হবে, যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সবশেষে, চীন-ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক এবং এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই অঞ্চলের যেকোনো পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, এই বিষয়ে নিয়মিতভাবে অবগত থাকা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন