আলোচনার টেবিলে চীন, জাপান ও কোরিয়া, ভাঙতে চলেছে পুরনো জোট?

জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে সম্প্রতি টোকিওতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করাই ছিল এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো তে-ইউল এই বৈঠকে যোগ দেন। তাঁরা পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আরও প্রসারিত করতে এবং বিভিন্ন প্রজন্মের উদ্বেগের বিষয়গুলো সমাধানে একমত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের পর এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে এটিই প্রথম বৈঠক।

বৈঠকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া বলেন, “আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। আমরা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, এটা বলা অত্যুক্তি হবে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই পরিস্থিতিতে সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিভেদ ও সংঘাত দূর করতে আমাদের আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে “ইতিহাসের প্রতি আন্তরিকভাবে দৃষ্টি রেখে তবেই আমরা ভবিষ্যৎ গড়তে পারি”। তিনি পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন, যা দেশগুলোকে “ঝুঁকি মোকাবিলা” করতে এবং জনগণের মধ্যে “পারস্পরিক বোঝাপড়া” বাড়াতে সহায়তা করবে।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের তিনটি দেশের মিলিত জনসংখ্যা প্রায় ১৬০ কোটি, এবং অর্থনৈতিক উৎপাদন ২৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বিশাল বাজার ও বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে পারি।”

চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করতে এবং ১৫ জাতির আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের (Regional Comprehensive Economic Partnership – RCEP) সদস্যপদ প্রসারিত করতে চায়।

বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো তে-ইউল চীনকে উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজি করাতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অবৈধ সামরিক সহযোগিতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি আনতে উত্তর কোরিয়াকে কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়া উচিত হবে না।

জাপানের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়, যেখানে গত ছয় বছরে প্রথমবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দূষিত পানি ছাড়ার কারণে চীন কর্তৃক জাপানি সামুদ্রিক খাদ্য আমদানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা হয়।

এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেলে তা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *