কিন্ডারগার্টেনে বিষ! অভিভাবকদের ক্ষোভ, সরকারের তদন্তে আস্থা নেই?

চীনের একটি কিন্ডারগার্টেনে সংঘটিত সীসা দূষণের ঘটনায় স্থানীয় সরকারের প্রতি জনগণের মধ্যে গভীর আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির গানসু প্রদেশের তিয়ানশুই শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের ২৩০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর শরীরে সীসার অস্বাভাবিক উপস্থিতি ধরা পরেছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন জানা যায়, শিশুদের খাবারে রং মেশানোর জন্য স্কুলের রান্নাঘরে অখাদ্য রং ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষকসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে।

তবে, ঘটনার তদন্ত নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। অনেকের প্রশ্ন, কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের সত্যতা কতটুকু? বিশেষ করে, শিশুদের রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের ভিন্নতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিয়ানশুই শহরের হাসপাতালগুলোতে করা পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে পাশের শহর শিয়ান-এর হাসপাতালগুলোর ফলাফলের মিল নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিয়ানের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার রিপোর্টে সীসার উচ্চমাত্রা পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের সন্তানের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক বলছে, কিন্তু শিয়ানের একটি হাসপাতালে পরীক্ষার পর জানা যায়, তার সন্তানের শরীরে সীসার পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। চীনের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।

এছাড়াও, কিভাবে এই পরিমাণ সীসা শিশুদের শরীরে প্রবেশ করলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্কুলের খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পরীক্ষা করে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে অনেক অভিভাবক মনে করেন, খাদ্যের মাধ্যমেই যে বিষক্রিয়া হয়েছে, তেমনটা নাও হতে পারে।

এই ঘটনার পর, চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে সরকারের তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে মনে করছেন, কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে। অতীতেও, একই এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ২০০৬ সালে তিয়ানশুই জেলার গ্রামবাসীদের শরীরে উচ্চমাত্রায় সীসা পাওয়া গিয়েছিল, তবে সেই ঘটনার কারণ আজও অজানা।

চীনের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যিনি আগে একটি সরকারি সংবাদ মাধ্যমের প্রধান ছিলেন, তিনি এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছেন, পরিবেশ দূষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক, তবে উদ্বেগ প্রকাশকারীদের বস্তুনিষ্ঠ থাকতে হবে এবং দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে সীসার এত উচ্চমাত্রা থাকতে হলে নিয়মিতভাবে কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে এর সংস্পর্শে আসতে হয়েছে। এক্ষেত্রে দূষণের উৎস চিহ্নিত করতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

বর্তমানে চীনে শিশুদের মধ্যে সীসা দূষণ একটি উদ্বেগের বিষয়। ২০১০ সালে সরকার এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ তহবিল গঠন করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *