চীনের উৎপাদন খাতে মন্দা, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব।
চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের উৎপাদন খাতে উল্লেখযোগ্য মন্দা দেখা দিয়েছে। এপ্রিল মাসে প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটির শিল্প উৎপাদন পরিমাপের সূচক (Purchasing Managers’ Index বা PMI) ৪৯.০-এ নেমে এসেছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের পর সর্বনিম্ন। এই তথ্য বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তনকে নির্দেশ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, অনেক কোম্পানি শুল্কের প্রভাব এড়াতে দ্রুত পণ্য রপ্তানি করতে শুরু করে, যার কারণে গত মাসে চীনের রপ্তানি ১২ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়।
তবে, এপ্রিল মাসের PMI সূচক প্রকাশ পাওয়ার পর পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে শুরু করে। এই সূচক ৫০-এর নিচে নেমে আসা মানে উৎপাদন খাতে সংকোচন। ব্লুমবার্গের একটি জরিপে পূর্বাভাস ছিল সূচকটি ৪৯.৭ হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ফলাফল ছিল তার চেয়েও খারাপ। মার্চ মাসে এই সূচক ছিল ৫০.৫, যা ছিল গত ১২ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্সের (NBS) পরিসংখ্যানবিদ ঝাও কিংহে জানান, এই পতনের প্রধান কারণ হলো ‘চীনের বাইরের পরিবেশে’ বড় ধরনের পরিবর্তন। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়বে এবং বিশ্বজুড়ে মন্দা দেখা দিতে পারে।
এপ্রিল মাসের দুর্বল উৎপাদন সূচকের মূল কারণ বাণিজ্য যুদ্ধ।
তিনি আরও যোগ করেন, “বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের সিদ্ধান্তগুলো বিলম্বিত হচ্ছে, ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাক্রো ডেটা আরও দুর্বল হবে।”
চীনের অর্থনীতি, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম, কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে সম্পূর্ণরূপে ঘুরে দাঁড়াতে সংগ্রাম করছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ চাহিদার অভাব এবং দীর্ঘকাল ধরে চলা আবাসন খাতের সংকট।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীন বিষয়ক অর্থনীতিবিদ জিকুন হুয়াং বলেন, “বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় চীনের অর্থনীতি চাপে পড়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যদিও সরকার আর্থিক সহায়তা বাড়াচ্ছে, তবে এটি সম্ভবত এই মন্দা সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।
আমরা ধারণা করছি, এ বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৫ শতাংশ হতে পারে।
গত বছর, চীন সরকার প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে সুদের হার কমানো এবং কিছু আবাসন কেনার বিধিনিষেধ শিথিল করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করে। এছাড়াও, ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ২০ লক্ষ নতুন শহুরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনেক অর্থনীতিবিদ চীনের ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে করছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), গোল্ডম্যান স্যাকস এবং ইউবিএস-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত শুল্কের প্রভাবের কারণে ২০২৫ ও ২০২৬ সালের জন্য চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। তারা কেউই চীনের সরকারি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখছে না।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান