চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শন: দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এর তাৎপর্য
চীন সম্প্রতি বেইজিং-এ এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে, যেখানে তারা অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামের সম্ভার প্রদর্শন করেছে। এই প্রদর্শনী ছিল প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর “নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা”-র ধারণাকে সমর্থন করার একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত, যেখানে চীনের স্থান সবার উপরে।
কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে ছিল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, অত্যাধুনিক ড্রোন এবং লেজার-নির্ভর অস্ত্র ব্যবস্থা, যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়েও উন্নত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামরিক কুচকাওয়াজে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) DF-61। এটি আট-অক্ষ বিশিষ্ট একটি ট্রাকে স্থাপন করা ছিল।
এছাড়াও, শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি গতিতে উড়তে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র (হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল বা এইচজিভি) প্রদর্শন করা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।
কুচকাওয়াজে বিভিন্ন ধরণের ড্রোনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এর মধ্যে ছিল বিশাল আকারের মনুষ্যবিহীন ডুবোজাহাজ থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান বহরের ‘আনুগত্যপূর্ণ সহযোগী’ হিসেবে কাজ করতে সক্ষম ড্রোন।
স্থলভাগে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত, মেশিনগান সজ্জিত এবং মাইন-পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত ড্রোনও দেখা গেছে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল লেজার-নির্ভর অস্ত্র ব্যবস্থা। চীন দুটি ভিন্ন ধরনের লেজার ব্যবস্থা প্রদর্শন করেছে: একটি বিশাল আকারের যা নৌ-বিমান প্রতিরক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং অন্যটি ছোট, যা স্থলভাগে সৈন্যদের সুরক্ষার জন্য ট্রাকের ওপর স্থাপন করা হয়েছে।
এই ধরনের অস্ত্র ‘নির্দেশিত শক্তি সম্পন্ন অস্ত্র’ (Directed Energy Weapons) শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত, যা প্রচলিত অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী হতে পারে।
সামরিক সরঞ্জামের এই বিশাল ভাণ্ডার চীনের ক্রমবর্ধমান শিল্প সক্ষমতার প্রমাণ। বিশ্লেষকদের মতে, চীন দ্রুতগতিতে অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি তৈরি ও ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় দ্রুত এবং বৃহত্তর পরিসরে ঘটছে।
চীনের সামরিক ব্যয় গত ৩০ বছরে ১৩ গুণ বেড়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের ব্যয় এখনো কম, তবে তারা দ্রুত ব্যবধান কমাচ্ছে।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে, চীনের সামরিক ব্যয় তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, চীন প্রতিরক্ষা খাতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে যথাক্রমে পাঁচ ও সাত গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে।
সমুদ্র পথেও চীন দ্রুত উন্নতি করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের নৌবহরে যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বেশি হবে।
তবে, সামরিক কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত সরঞ্জামগুলো এখনো পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে পরীক্ষিত হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক কুচকাওয়াজ সামরিক সক্ষমতার নির্ভরযোগ্য সূচক নয়।
চীনের এই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং সামরিক কৌশলগত পরিবর্তনেও প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন