চীনা নাটক: একাকীত্বে আশ্রয়, ভালোবাসার গল্প!

শিরোনাম: কষ্ট থেকে মুক্তি: কীভাবে বিদেশি ধারাবাহিক আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিল

ছোটবেলায় দিদার বাড়ি, আর সেখানেই প্রথম পরিচয় বিদেশি ধারাবাহিকের সঙ্গে। আট বছর বয়সে, চীনের তৈরি কিছু ধারাবাহিক দেখতে শুরু করি, যা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমার দিদা প্রায়ই চীন থেকে আসা কিছু ক্যাসেট চালাতেন, আর আমি তাঁর সঙ্গেই সেগুলিতে চোখ রাখতাম। সেগুলির গল্প বলার ধরন, আবেগঘন দৃশ্য, আর চরিত্রের গভীরতা আমাকে মুগ্ধ করত।

ধারাবাহিকের জগৎটা ছিল যেন এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ—সব কিছুই যেন সেখানে জীবন্ত হয়ে উঠত। গল্পের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা রহস্য, অপ্রত্যাশিত মোড়, আর চরিত্রের জটিলতা আমাকে এতটাই আকর্ষণ করত যে, আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। বিশেষ করে, অতীতের গল্পগুলো আমার মন ছুঁয়ে যেত।

আমার মনে আছে, “শুয়ে কে” নামে একটি ধারাবাহিক দেখতাম। সেখানে এক রাজকুমারীর গল্প ছিল, যিনি ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলেন। তাঁর জীবনে নেমে আসে গভীর এক বেদনা, যা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিত। সেই সময়ে হয়তো আমি মায়ের হারানোর কষ্ট বুঝতাম না, কিন্তু ধারাবাহিকের চরিত্রগুলোর বেদনা আমাকে এতটাই প্রভাবিত করত যে, আমি নিজেও তাদের দুঃখে চোখের জল ফেলতাম।

এরপর, আরও অনেক ধারাবাহিক দেখেছি। মায়ের উৎসাহে, আমি চাইনিজ ভাষা শিখতে শুরু করি, কারণ তিনি জানতেন, এই ধারাবাহিকগুলো আমাকে ভাষার প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলবে। সময়ের সাথে সাথে, আমি বিভিন্ন ধরনের ধারাবাহিক দেখতে শুরু করি, যেগুলোতে ছিল জটিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গভীর ভালোবাসার গল্প, আর অপ্রত্যাশিত ঘটনার ঘনঘটা।

যখন প্রথমবার ভালোবাসার মানুষটিকে হারালাম, তখন এই ধারাবাহিকগুলোই আমার আশ্রয়স্থল হয়েছিল। তাদের গল্পে, আমি আমার কষ্ট খুঁজে পেতাম, আর তাদের কান্নার সাথে আমার কান্না মিশে যেত। তাদের দুঃখের সাথে একাত্ম হয়ে, যেন আমি আমার ভেতরের কষ্টকে হালকা করতে পারতাম।

জীবন যত এগিয়েছে, আমার রুচিও বদলেছে। তবে, একটি জিনিস কখনো বদলায়নি—সেটা হলো, ভালো গল্পের প্রতি আমার আকর্ষণ। এমনকি, এখন যখন আমি সেই পুরোনো ধারাবাহিকগুলো দেখি, তখনও তাদের আবেগঘন দৃশ্যগুলো আমাকে ছুঁয়ে যায়, আর আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারি না।

দু’বছর আগে, আমার সন্তানের জন্ম হয়। সেই সময়ে, আমি কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে, আমরা তাইওয়ানের একটি কেন্দ্রে ছিলাম, যেখানে আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেষ্টা করছিলাম। সেই সময়, আমরা আবার ধারাবাহিকের আশ্রয় নিলাম। গভীর রাতে, যখন আমার সন্তান ঘুমিয়ে থাকত, তখন আমরা একসঙ্গে বসে নাটক দেখতাম।

একদিন, একটি দৃশ্যে এক মা তাঁর সন্তানকে হারানোর বেদনা প্রকাশ করছিলেন। সেই দৃশ্যটি আমাকে এতটাই নাড়া দেয় যে, আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। হয়তো তাঁর দুঃখ প্রকাশের ধরনটা ছিল একটু বেশি নাটকীয়, কিন্তু সেই মুহূর্তে, আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ঠিক কতটা অসহায় ছিলেন। সেই মুহূর্তে, আমি অনুভব করলাম, একা নই—আমার মতো আরও অনেকে আছে, যারা এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে।

আজও, আমি সেই ধারাবাহিকগুলোর কথা মনে করি, যা আমাকে জীবনের কঠিন সময়ে সাহস জুগিয়েছিল। তারা আমাকে শিখিয়েছিল, কীভাবে কষ্টকে অনুভব করতে হয়, আর কীভাবে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হয়।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *