দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক, বাড়ছে বাণিজ্য?

চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে, যার অংশ হিসেবে সম্প্রতি দেশটির জিয়ামেন শহরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে যোগ দেন ১১টি দ্বীপরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা, যেখানে চীন তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সভাপতিত্বে কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট তানেতি মামাউ সহ নিইউ, টোঙ্গা, নাউরু, মাইক্রোনেশিয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, পাপুয়া নিউ গিনি, কুক আইল্যান্ডস, ফিজি এবং সামোয়ার শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকরা অংশ নেন। এটি ছিল এ ধরনের তৃতীয় বৈঠক, তবে চীনে সরাসরি অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম সম্মেলন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো— বাণিজ্য বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে চীন এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে, যখন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের প্রতি তুলনামূলকভাবে কম মনোযোগ দিচ্ছে, তখন চীনের এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণস্বরূপ, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্ত এবং শুল্ক আরোপের হুমকির কারণে বিশ্বে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা চীনকে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের এই আগ্রহের কারণ হলো— তারা দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চায়, যা তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

এরই ধারাবাহিকতায়, চীন ইতিমধ্যেই সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়াও, তারা ভানুয়াতু ও কিরিবাতিতে উপদেষ্টা পাঠিয়েছে এবং অন্যান্য দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গেও অনুরূপ চুক্তি করতে আগ্রহী।

চীনের এই পদক্ষেপকে নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে চীন ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে।

একইসঙ্গে, এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ, গভীর সমুদ্রের কেবল এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বৈঠকে তাইওয়ান ইস্যুও আলোচনার বিষয় ছিল। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা করছে।

বর্তমানে, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, পালাউ এবং টুভালু— এই তিনটি দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এলাকাটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অপরিহার্য। এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলে তা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *