চীন: আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে কিu দারুণ চাল?

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা এখন লন্ডনে পৌঁছেছে, যেখানে উভয় পক্ষই গত মাসের সাময়িক যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তিধর দেশের এই আলোচনায় ফোকাস মূলত বিরল মৃত্তিকা ধাতু এবং অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির উপর। খবর অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে চীনের কাছ থেকে বিরল মৃত্তিকা ধাতুগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে, যার বিনিময়ে তারা কিছু ক্ষেত্রে তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে রাজি হতে পারে।

আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল বিরল মৃত্তিকা ধাতু। এই ধাতুগুলো আধুনিক ইলেকট্রনিকস, যানবাহন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন এই ধাতুগুলোর উৎপাদনে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা তাদের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা তৈরি করেছে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেইজিং সম্ভবত সহজে এই নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে চাইবে না, কারণ এটি তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

যুক্তরাষ্ট্র চাইছে চীনের বাজারে তাদের পণ্য প্রবেশ সহজ করতে। এর অংশ হিসেবে তারা কিছু রপ্তানি বিধিনিষেধ শিথিল করতে পারে।

তবে, অত্যাধুনিক কিছু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে আগ্রহী, যা তারা চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য অত্যাবশ্যক মনে করে। এই বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

এদিকে, চীনের পক্ষ থেকেও কিছু ছাড়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করার কথা জানিয়েছে।

তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের বাজারের নিয়ন্ত্রণ আগের মতো সহজ নাও হতে পারে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে কিছু প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি কমে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতি দেশটির অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মে মাসে চীনের রপ্তানি মাত্র ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে এপ্রিল মাসে এটি ছিল ৮.১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা চীনের কিছু মাইক্রোচিপের উপর থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করতে রাজি হতে পারে, যা চীনের উৎপাদন খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence) ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম ‘এনভিডিয়া’ (Nvidia)-এর মতো উন্নত মানের চিপের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হবে।

এই আলোচনায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা লন্ডনে মিলিত হয়েছেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার।

অন্যদিকে, চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং, বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনটাও এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান আলোচক লি চেংগাং।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য আলোচনা শুধু তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়তে পারে।

বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

আলোচনার অগ্রগতি এবং এর ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসে, সেদিকে এখন সবার নজর।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *