চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, বেইজিং তাদের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মার্কিন শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে চীন।
দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও রয়েছেন, শুক্রবার এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সহায়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে বহুপাক্ষিকতার (Multilateralism – বহুদেশীয় বাণিজ্যনীতি) প্রতি সমর্থন জানানো এবং একতরফা বাণিজ্য নীতির (Unilateralism – একক দেশ কর্তৃক নির্ধারিত বাণিজ্যনীতি) বিরোধিতা করার কথা বলা হয়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুক্রবার জানান, দুই দেশের মধ্যে শুল্ক নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে না।
বর্তমানে, চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ, যেখানে চীন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
চীন মনে করে, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আগে তাদের সকল ‘একতরফা’ শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার অর্থনীতির ওপর ‘বহিরাগত ধাক্কা’ মোকাবিলায় নতুন নীতি প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই বড় ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করার সম্ভাবনা কম। বাণিজ্য যুদ্ধের সময় এবং এর প্রভাব মূল্যায়ন করতে কিছুটা সময় লাগবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চীন কিছু নির্দিষ্ট মার্কিন পণ্যের শুল্ক ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করছে। যদিও এ বিষয়ে বেইজিং কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
খবর অনুযায়ী, চীন সরকার ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্ক ছাড়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন জরুরি পণ্য চিহ্নিত করতে বলেছে। অনলাইনে প্রকাশিত একটি গোপন নথিতে ১৩১টি পণ্যের তালিকা দেখা গেছে, যার মধ্যে ঔষধ এবং মহাকাশ শিল্পের উপাদানও রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অফ কমার্স ইন চায়না নিশ্চিত করেছে যে তারা কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে, কারণ অনেক কোম্পানি তাদের গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন আমদানির উপর নির্ভরশীল।
একইভাবে, আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স জানিয়েছে, কিছু ওষুধ কোম্পানি ইতিমধ্যে তাদের নির্দিষ্ট ওষুধের জন্য ছাড় পেয়েছে। ফরাসি এরোস্পেস কোম্পানি সাফরানও তাদের কিছু বিমানের যন্ত্রাংশের জন্য শুল্ক ছাড় পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপগুলো চীনা কোম্পানিগুলোর খরচ কমাতে এবং মার্কিন রপ্তানিকারকদের উপর চাপ কমাতে পারে।
এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
বিশ্ব বাজার এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর কোনো লক্ষণের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই দুটি দেশের মধ্যে হয়ে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলি নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা