মার্কিন হুমকি: চীন-পানামা সম্পর্ক নিয়ে কী ঘটছে?

পানামা খাল নিয়ে চীন ও আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ এক বিবৃতিতে চীনের বিরুদ্ধে পানামা খালের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন সরকার দ্রুত এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং পাল্টা যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথ পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনোর সঙ্গে বৈঠকের পর মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা উভয় দেশই মিলিতভাবে খালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু কোম্পানির মাধ্যমে পানামা খালের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ।

হেগসেথের মতে, এর ফলে পানামার উপর নজরদারি চালানোরও সম্ভাবনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং পানামার নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

চীনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের জবাবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য পানামার সঙ্গে চীনের সহযোগিতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা আরও জানায়, পানামার সঙ্গে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে পানামার নিজস্ব এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।

পানামা খালের গুরুত্ব বিশ্ব অর্থনীতিতে অপরিসীম। এটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

এই খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বিভিন্ন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই খাল ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত চার্জ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন এবং চীনের প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন, যদিও পানামা সরকার তা অস্বীকার করেছে।

বর্তমানে, হংকং ভিত্তিক একটি কনসোর্টিয়ামের অধীনে থাকা খালের উভয় পাশের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও আলোচনা চলছে। এই কনসোর্টিয়াম তাদের নিয়ন্ত্রণ অংশীদারিত্ব ব্ল্যাকরক ইনকর্পোরেটেড-এর কাছে বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা ঘটনাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, চীনের উপস্থিতি সম্ভবত একটি চুক্তির লঙ্ঘন, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৯ সালে পানামার কাছে খালটি হস্তান্তর করেছিল।

পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো চীনের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকেই তারা মনোযোগ দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে, চীন এই খাল তৈরি করেনি, এটি পরিচালনাও করে না এবং এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্র পানামার সঙ্গে একত্রে খালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *