চীনের নীরবতা: পোপের প্রয়াণে বেইজিংয়ের দ্বিধা
বিশ্ব যখন পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে শোক প্রকাশে ব্যস্ত, তখন চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ নিস্তেজ। কমিউনিস্ট শাসিত এই দেশে সরকারিভাবে কোনো ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
দেশটির সরকার ও ভ্যাটিকানের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই জটিল। পোপের মৃত্যুতে বেইজিং এমন একজন বিশ্বনেতাকে হারিয়েছে যিনি ভ্যাটিকানকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।
ভ্যাটিকান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ১৯৫০ এর দশকের শুরু থেকে ভালো ছিল না। ১৯৫১ সালে চীনের কমিউনিস্ট সরকার ভ্যাটিকানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং সেখানকার পোপের দূতকে বহিষ্কার করে।
এরপর থেকে তাইওয়ানের প্রতি ভ্যাটিকানের সমর্থন বেইজিংয়ের অসন্তুষ্টির কারণ। তাইওয়ানকে চীন তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে পোপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তারা পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রতিনিধি পাঠাবে।
পোপ ফ্রান্সিস চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চেয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে চীনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে চীনে ক্যাথলিক বিশপ নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়।
যদিও এই চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে চীনের অভ্যন্তরে যারা ভ্যাটিকানের প্রতি অনুগত ছিলেন, তারা এই চুক্তির কারণে কিছুটা হতাশ হয়েছেন।
কারণ তারা মনে করেন, এর ফলে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ধর্মীয় বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। তারা কেবল রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গির্জায় উপাসনার অনুমতি দেয়।
চীনের প্রায় ৬ মিলিয়ন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর কথা জানা যায়, তবে অনেক ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেকে বেইজিংয়ের নজর এড়িয়ে গোপনীয়ভাবে প্রার্থনা করেন।
পোপ ফ্রান্সিস চীন সফরে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি চীনের আকাশসীমা ব্যবহার করারও অনুমতি পেয়েছিলেন।
২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সময় চীনের আকাশপথ ব্যবহার করার সময় তিনি চীনের প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
২০২৩ সালে মঙ্গোলিয়ায় এক ভাষণে তিনি “চীনা জনগণের প্রতি শুভকামনা” জানিয়েছিলেন।
তবে চীনের এই নীরবতা একদিকে যেমন দেশটির দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবের প্রমাণ, তেমনি ভ্যাটিকানের সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ইঙ্গিতও বহন করে।
চীনের এই প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো তাইওয়ান নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে ভিন্নমত।
তথ্য সূত্র: CNN