চীনের পাল্টা পদক্ষেপ: মার্কিন পণ্যের উপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে, চীন এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সকল পণ্যের উপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার, স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ৪টা থেকে এই নতুন শুল্কহার কার্যকর হয়েছে।
বাণিজ্য যুদ্ধ: কারণ ও প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
চীনের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে প্রবেশ করা মার্কিন পণ্যগুলির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। গত বছর, প্রায় ১৪৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে রপ্তানি করা হয়েছিল।
বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – WTO)-এর প্রধান এনগোজি ওকঞ্জো-আইওয়ালা সতর্ক করে বলেছেন, এই বাণিজ্য বিরোধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতি দুটি ব্লকে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক জিডিপি-কে প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
আলোচনার প্রস্তাব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
তবে, তারা কোনো চাপ বা হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রতি কিছুটা নরম সুর দেখালেও, বাণিজ্য আলোচনার সম্ভাবনা এখনো স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন একটি চুক্তিতে আসতে চায়, তবে কীভাবে তা করবে, সে বিষয়ে তারা অবগত নয়।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়তে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিশেষ করে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়, তবে বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের আমদানি খরচ বৃদ্ধি করবে।
একইভাবে, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সম্ভাব্য প্রতিকূলতা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা