চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলোতে পণ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। সম্প্রতি এক খবরে জানা গেছে, গত ১২ ঘণ্টায় চীন থেকে একটিও পণ্যবাহী জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার প্রধান দুটি বন্দরে পৌঁছায়নি।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর এমন ঘটনা আর ঘটেনি। লস অ্যাঞ্জেলেস ও লং বিচ বন্দর নিয়ে গঠিত সান পেড্রো বে কমপ্লেক্সে সাধারণত চীন থেকে প্রতিদিন অনেক জাহাজ আসে।
কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, জাহাজের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এই দুটি বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করা হয়। এর ফলস্বরূপ, এখন অনেক ব্যবসায়ীর কাছে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কারণ, এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। লং বিচ বন্দরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মারিও কর্ডেরো উদ্বেগের সঙ্গে বলেছেন, জাহাজ চলাচল হ্রাসের বর্তমান গতি অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ।
পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ভোক্তারা বাজারে পণ্যের অভাব অনুভব করতে পারেন। লং বিচ বন্দরে আসা মোট পণ্যের প্রায় ৬৩ শতাংশই আসে চীন থেকে।
যদিও ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৭২ শতাংশ। চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড় অংশ। তবে, বর্তমানে সেই সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে।
এদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ কোম্পানি মার্স্ক জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
বর্তমানে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে হলে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে পণ্য পাঠাতে শুল্কের হার ১২৫ শতাংশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উভয় দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন।
শোনা যাচ্ছে, শুল্কের হার কমিয়ে ৮০ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করা না গেলে, বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে।
অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি শিক্ষা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক এবং শুল্ক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, বাণিজ্য বিরোধের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। তথ্য সূত্র: সিএনএন