চীনের বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে নিজেদের অর্থনীতি সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বেইজিং। মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাবকে হালকা করে দেখিয়ে তারা বলছে, চাকরি বাঁচানো এবং চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে ক্ষতির পরিমাণ সীমিত করার মতো যথেষ্ট উপায় তাদের হাতে রয়েছে।
সম্প্রতি চীনের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার এক বৈঠকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে তারা ব্যবসা এবং বেকারদের জন্য সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ এবং অন্যান্য নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, গত সপ্তাহে চীনের প্রভাবশালী পলিটব্যুরোর একটি বৈঠকেও রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে কীভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের নীতিনির্ধারকেরা এখন বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে কোনো আলোচনা হচ্ছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি শুল্কের বিষয়ে চীনা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন।
তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বেইজিং এই ধরনের আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যগুলোর ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে।
চীনের কর্মকর্তারা তাদের দেশে ‘কথিত হুমকি’ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আলোচনার জন্য ভিত্তিহীন বিষয় তৈরি করে, কথায় অটল থাকে না এবং এর মাধ্যমে সবাই একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছে যে তথাকথিত ‘পাল্টা শুল্ক’ ঐতিহাসিক প্রবণতা এবং অর্থনৈতিক আইনের পরিপন্থী। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিধি এবং শৃঙ্খলাকে প্রভাবিত করে এবং দেশগুলোর ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থের গুরুতর ক্ষতি করে।”
বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে চলমান এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দিতে পারে এবং এর প্রভাব বিশ্বজুড়ে অনুভূত হতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে কর্মসংস্থান হ্রাসসহ বিভিন্ন ধাক্কা সামলে চীন এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং কিছু বিনিয়োগ সংস্থা এই বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে প্রায় ৪ শতাংশ করেছে। এর ফলে, দেশটির রপ্তানিমুখী লক্ষ লক্ষ চাকরির ওপর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
তবে চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে তাদের অর্থনীতি এ বছর প্রায় ৫ শতাংশ হারে বাড়তে সক্ষম হবে। জনশক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপমন্ত্রী ইউ জিয়াডং সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনের কর্মসংস্থান নীতি বিষয়ক সরঞ্জাম যথেষ্ট। সরকার কোম্পানিগুলোকে কর্মীদের ধরে রাখতে সহায়তা করবে এবং বেকারদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।
চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের উপপরিচালক ঝাও চেনক্সিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ হলেও চীনের জ্বালানি সরবরাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শস্য ও অন্যান্য কৃষি পণ্য আমদানি ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছে এবং খাদ্য সরবরাহে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জু লান জানিয়েছেন, ঋণ প্রদানের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সুদের হার কমানো হবে এবং রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা শিথিল করা হবে। ঝাও চেনক্সিন আরও বলেন, পুরাতন যানবাহন, যন্ত্রপাতি এবং কারখানার সরঞ্জাম পরিবর্তন করার জন্য ভর্তুকিসহ বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো যেতে পারে।
এর ফলে, সরঞ্জাম আপগ্রেডের চাহিদা বছরে ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও, শহরগুলোতে আরও বেশি মানুষকে স্থানান্তরিত করার জন্য চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে। ঝাও বলেন, “শহরায়ন হার ১ শতাংশ বাড়লে বিনিয়োগের চাহিদা কয়েক ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারণের জন্য আমাদের দেশে যথেষ্ট সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস