চীনের অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে লাইভ ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে প্রেম খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা। চীনের বিশাল জনসংখ্যার একটি অংশ, যাদের বয়স ১৫ বছরের বেশি, তারা একাকী জীবন যাপন করছেন। এই পরিস্থিতিতে, ডেটিংয়ের চিরাচরিত পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে। তাই, লাইভ ভিডিও চ্যাটরুমগুলো তাদের কাছে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত মানুষের সংখ্যা ২৪ কোটিতে পৌঁছেছে, যা একটি রেকর্ড। দ্রুত জন্মহার হ্রাস এবং বয়স্ক জনসংখ্যার কারণে, সরকার অবিবাহিতদের বিয়ে করতে এবং সন্তান নিতে উৎসাহিত করছে। এমনকি, দেশটির মন্ত্রিসভা স্থানীয় সরকারগুলোকে তরুণদের জন্য ডেটিংয়ের আরও সুযোগ তৈরি করতে বলেছে।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কর্মজীবনের চাপ এবং সামাজিক প্রত্যাশার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চীনের অনেক কোম্পানি কর্মীদের সপ্তাহে ৬ দিন, দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ‘লাইং ফ্ল্যাট’ বা কাজ কমিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা অবিবাহিত থাকার একটি কারণ।
চীনের এই নতুন ডেটিং ট্রেন্ডে, ‘সাইবার ম্যাচমেকার’ নামক ব্যক্তিরা ভিডিও চ্যাটরুম তৈরি করেন, যেখানে হাজারো দর্শক রিয়েল টাইমে তাদের কার্যক্রম দেখতে ও মন্তব্য করতে পারেন। এই ম্যাচমেকাররা শুধু আলোচনা শুরুই করেন না, বরং সম্পর্ক বিষয়ক পরামর্শও দিয়ে থাকেন।
চীনের সামাজিক মাধ্যম ‘RedNote’ – এ তিয়ান সিন নামের একজন সাইবার ম্যাচমেকার গত এক বছর ধরে ভার্চুয়াল গ্রুপ ডেটিংয়ের আয়োজন করছেন। দিনের বেলা তিনি একটি প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন, আর রাতে হয়ে ওঠেন ডেটিং বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, সহানুভূতি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অংশগ্রহণকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, স্টিভ চেন নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ এই লাইভ ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমেই প্রথম প্রেম খুঁজে পান। তিনি জানান, আগে ডেটিংয়ের সুযোগ পেতেন না, নিজেকে ‘মুতাই সোলো’ (গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকে একাকী) মনে করতেন। কিন্তু, লাইভ ভিডিও চ্যাটরুমেই তিনি তার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে পান।
ভিডিও চ্যাটে সাধারণত অংশগ্রহণকারীদের বয়স, উচ্চতা, পেশা, আয়, এবং সঙ্গীর প্রত্যাশা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। এরপর তারা তাদের দৈনন্দিন জীবন এবং কাজ নিয়ে আলোচনা করেন। দর্শকরাও এই সময় মন্তব্য করে তাদের মতামত জানাতে পারেন।
চীনের এই ডেটিং সংস্কৃতি চিরাচরিত বিবাহ বাজারের বিকল্প হিসেবেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যেখানে পরিবারের সদস্যরা তাদের অবিবাহিত সন্তানদের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজে দেন। এছাড়াও, ডেটিং অ্যাপগুলোর একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতেও অনেকে এই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
ক্রিস্টিন ঝাং নামের একজন নারী জানান, লাইভ ভিডিওগুলো অ্যাপের চেয়ে অনেক বেশি মজাদার ও আকর্ষণীয়। তিনি বলেন, “এখানে প্রোফাইলের ছবিগুলোর বাইরেও, একজন মানুষের কথা বলার ধরন ও আচরণও দেখা যায়।”
চীনের এই নতুন ডেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে, যারা একা জীবন কাটাচ্ছেন, তারা যেমন তাদের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাচ্ছেন, তেমনি সমাজে ভালোবাসার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: Associated Press