চীনের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের তথ্যের অনুসন্ধানে বেইজিংয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে দেশটির একটি সংসদীয় কমিটির করা অনুরোধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাকে “অতিরিক্ত গুরুত্ব” দেওয়ার শামিল হিসেবে অভিহিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের ‘হাউস সিলেক্ট কমিটি অন দ্য চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি’র চেয়ারম্যান জন মুলেনার সম্প্রতি ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নত প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। মুলেনারের অভিযোগ, বেইজিং সংবেদনশীল প্রযুক্তি হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রোগ্রামগুলোতে তাদের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাটিকে অতিরঞ্জিত করা বন্ধ করা এবং সে দেশে চীনা শিক্ষার্থীদের “বৈধ অধিকার ও স্বার্থ” রক্ষা করা। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই চীনা নাগরিক এবং তারা দেশটির “অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে” অবদান রাখছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অনেক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় চীনা শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে স্বাগত জানিয়েছে, কারণ তারা সাধারণত বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে সম্পূর্ণ টিউশন ফি পরিশোধ করে থাকে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে, চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুলেনারের মতো আইনপ্রণেতারা উদ্বিগ্ন। তারা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ টিউশন ফি’র বিনিময়ে মার্কিন গবেষণা কার্যক্রমকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
মুলেনার তার চিঠিতে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ভিসা ব্যবস্থা বেইজিংয়ের জন্য একটি “ট্রোজান হর্স”-এর মতো, যা “আমাদের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার” সরবরাহ করে এবং “আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি” সৃষ্টি করে।
চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি, পারডু ইউনিভার্সিটি, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়, ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায়। এসব চিঠিতে চীনা শিক্ষার্থীদের তহবিল উৎস এবং তাদের গবেষণা সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে “আবেদনকারী, ভর্তি এবং তালিকাভুক্তির দেশভিত্তিক হিসাব” জানতে চাওয়া হয়েছে।
এর আগে, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধি রিলে মুর এক পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনা নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন বা বিনিময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ করার প্রস্তাব করেন। তিনি “স্টপ সিসিপি ভিসা অ্যাক্ট” নামে একটি বিল কংগ্রেসে উত্থাপন করেছেন, যদিও ব্যাপক বিরোধিতার কারণে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম।
সমালোচকরা বলছেন, এই বিলটি ১৮৮২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত চীনের অভিবাসন সীমিত করার লক্ষ্যে প্রণীত “চাইনিজ এক্সক্লুশন অ্যাক্ট”-এর কথা মনে করিয়ে দেয়।
রিলে মুর এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি “আমাদের বৃহত্তম ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কখনোই ক্ষমা চাইবেন না।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা