চীনের প্রস্তাবিত ‘সুপার-এম্বাসি’ নিয়ে লন্ডনে পুলিশের উদ্বেগ
লন্ডনে চীনের একটি বিশাল দূতাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা ঘিরে এখনো উদ্বেগ প্রকাশ করছে মেট্রোপলিটন পুলিশ (মেট)। টাওয়ার ব্রিজ এলাকার কাছে প্রস্তাবিত এই ‘সুপার-এম্বাসি’ নির্মাণ হলে সেখানে বড় ধরনের বিক্ষোভ হতে পারে এবং এর ফলে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হবে বলেই মনে করছে তারা।
ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীরা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুলিশের এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জোন সাভেল জানিয়েছেন, দূতাবাসটির সামনে ৫০০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ হলে যান চলাচলে সমস্যা হবে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে।
তিনি প্রাক্তন কনজারভেটিভ নেতা ইয়ান ডানকান স্মিথ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এই উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছেন।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত দূতাবাসটির স্থানে এর আগেও বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে সেখানে দুটি বড় বিক্ষোভ হয়, যেখানে প্রায় ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ মানুষ অংশ নিয়েছিল।
পুলিশের ধারণা, এই স্থানে একসঙ্গে এত মানুষের সমাবেশ নিরাপদ নাও হতে পারে। এছাড়া, মে মাসের শুরুতে আরও একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হচ্ছে।
চীন, রয়েল মিন্ট কোর্টে প্রায় ২০,০০০ বর্গমিটার জায়গার ওপর এই নতুন দূতাবাস তৈরি করতে চায়।
এটি একটি আঠারো শতকের গ্রেড-২ তালিকাভুক্ত ভবন।
স্থানীয় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল (Tower Hamlets Council) ডিসেম্বর ২০২২-এ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও, গত গ্রীষ্মে শ্রমিক দল (Labour) ক্ষমতায় আসার পর চীন পুনরায় আবেদন করে।
বর্তমানে বিষয়টি কাউন্সিলের হাত থেকে মন্ত্রীদের হাতে এসেছে এবং একটি স্থানীয় তদন্ত চলছে।
এই তদন্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন সংগঠন তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন হাউজিং, কমিউনিটি এবং স্থানীয় সরকার বিষয়ক সেক্রেটারি অ্যাঞ্জেলা রেইনারের হাতে।
ডিসেম্বরে, মেট পুলিশ জানিয়েছিল, যদি ১০০ জনের বেশি মানুষ দূতাবাস চত্বরে একত্রিত হয়, তবে তা রাস্তার উপর ছড়িয়ে পড়বে, যা জনসাধারণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে এবং রাজধানীর যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
যদিও, এর পরের মাসেই তারা তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়।
কারণ হিসেবে তারা জানায়, চীন কর্তৃক তৈরি একটি পুরোনো (তিন বছর আগের) টেকনিক্যাল ডকুমেন্ট তারা পুনরায় পর্যালোচনা করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ওই স্থানে ২,০০০ বিক্ষোভকারীকে নিরাপদে রাখা যেতে পারে।
মেট পুলিশের আপত্তিতে রাজি হওয়ায় দূতাবাস নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদনের পথ খুলে যায়।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পুলিশের এই তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আগের আপত্তির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে।
তবে পরে তারা জানায়, পুলিশের আপত্তির প্রত্যাহার হওয়ায় তারা আর এই তথ্যের উপর নির্ভর করতে পারছে না।
ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় তদন্তে, বাসিন্দাদের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মন্ত্রীরা দূতাবাসের প্রস্তাবের পক্ষে মেট পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, যেমন—পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার—প্রকাশ্যে দূতাবাস পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
তারা এক যৌথ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘দেশগুলোর রাজধানীতে কার্যকরী কূটনৈতিক স্থান থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ’।
জানা গেছে চীন এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাইছে।
ফলে দূতাবাস নির্মাণের অনুমতি পাওয়া তাদের জন্য একটি কূটনৈতিক অগ্রাধিকার।
সাভেলের চিঠিটি ইন্টার-পার্লামেন্টারি অ্যালায়েন্স অন চায়নার (আইপ্যাক) সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পরেই পাঠানো হয়েছিল।
আইপ্যাক দূতাবাস প্রস্তাবের সমালোচক এবং বেইজিংয়ের প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণের পক্ষে।
ডানকান স্মিথ জানিয়েছেন, তিনি মেট পুলিশের কাছে তাদের উদ্বেগের কথা মন্ত্রীদের জানাতে বলবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি জাতীয় নিরাপত্তা এবং হস্তক্ষেপের যুক্তি যথেষ্ট না হয়, তবে টাওয়ার ব্রিজ জংশন নিয়মিত বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সারা লন্ডন থেকে কর্মকর্তাদের আনা-নেওয়ার বিষয়টি সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।’
মেট পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাদে প্রস্তাবিত উন্নয়ন সম্পর্কে তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে।
লেবার পার্টির সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ব্লেয়ার ম্যাকডুগাল বলেছেন, ‘মেট পুলিশের মূল্যায়ন স্পষ্ট: রয়েল মিন্ট কোর্টের বাইরে প্রতিবাদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই, যেখানে বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং এর জন্য প্রচুর পুলিশি সম্পদ প্রয়োজন হবে, যা রাস্তায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিবাদের অধিকার থাকে, দূতাবাস এমন একটি স্থানে থাকা উচিত যেখানে সেই অধিকার নিরাপদে বজায় রাখা যায়।’
আইপ্যাকের নির্বাহী পরিচালক লুক ডি পুলফোর্ড বলেন, ‘ইতিমধ্যে এই স্থানে বড় বিক্ষোভের জন্য জনগণের প্রচুর অর্থ খরচ হয়েছে।
এটি নিরাপদ নয় এবং পর্যাপ্ত জায়গাও নেই।
এই ভুল সিদ্ধান্তের দূতাবাস নির্মাণের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত বড় ধরনের বিক্ষোভ চলতেই থাকবে।’
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান