শুল্ক কমলেও ব্যবসায় ধস! ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে দিশেহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য শুল্কের অস্থিরতা: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্কট এবং বিশ্বায়নের পাঠ।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুই দেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য শুল্কের ওঠানামা বিশ্বজুড়ে ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাগুলোর জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা এলেও, অনেক ব্যবসার মালিক বলছেন, পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ।

এই পরিবর্তনগুলো একদিকে যেমন তাদের ব্যবসার খরচ বাড়াচ্ছে, তেমনি অনিশ্চয়তাও সৃষ্টি করছে, যা তাদের টিকে থাকার পথে এক বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও, বিশ্ব বাণিজ্য নীতির এই পরিবর্তনগুলোর প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা পণ্যের ওপর শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এর ফলে, আমদানি-নির্ভর ব্যবসাগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

যদিও পরবর্তীতে এই হার কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে, তবুও অনেক ব্যবসায়ীর মতে, এটি তাদের জন্য এখনো উদ্বেগের কারণ।

উদাহরণস্বরূপ, বেবি প্রোডাক্ট প্রস্তুতকারক একটি মার্কিন কোম্পানি, ‘বিজি বেবি’র প্রতিষ্ঠাতা বেথ ফিনবো বেনিকে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, শুল্ক কমার ফলে কিছুটা স্বস্তি এসেছে, কিন্তু এটি এখনো তার ব্যবসার জন্য বিশাল বোঝা।

তার মতে, এই শুল্কের কারণে তাকে একটি চালানের জন্য অতিরিক্ত ৪৮ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার সমান।

বাণিজ্য শুল্কের এই পরিবর্তনগুলো কেবল খরচ বৃদ্ধিই করছে না, বরং সরবরাহ শৃঙ্খলেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

তারা হয় ব্যবসার আকার ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থা ‘নার্ডওয়ালেট’-এর অর্থনীতিবিদ এলিজাবেথ রেন্টার মতে, এই শুল্ক হ্রাসের ফলে কিছু স্বস্তি মিললেও, বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব এখনো অনেক। বিশেষ করে ছোট ব্যবসার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়ালমার্টের মতো বৃহৎ খুচরা বিক্রেতারাও শুল্কের কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতে, শুল্কের কারণে তাদের পক্ষে আগের দামে পণ্য বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর ফলে, ছোট ব্যবসায়ীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তাদের পক্ষে এই খরচ বহন করা কঠিন।

এই পরিস্থিতিতে, অনেক ব্যবসায়ী বিকল্প পথ খুঁজছেন। কেউ কেউ তাদের ব্যবসার আন্তর্জাতিক প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছেন, আবার কেউ উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন।

তবে, বাজারের এই অস্থিরতা তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।

বাস্তবতা হল, বিশ্ব বাণিজ্য একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন দেশের মধ্যে শুল্কনীতি এবং বাণিজ্য চুক্তিগুলো ছোট ব্যবসার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশের অর্থনীতিও আমদানি ও রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।

বর্তমানে, বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থির পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নিজেদের ব্যবসার ঝুঁকি মূল্যায়ন করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে, অনেক ব্যবসার টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *