মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ গুরুতর রূপ নিচ্ছে, যেখানে উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর শুল্কের বোঝা বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই বাণিজ্য বিরোধে চীন সম্ভবত সহজে নতি স্বীকার করবে না। বিশ্লেষকদের মতে, এই লড়াইয়ের মূল কারণ হলো, উভয় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে চীনের পণ্য আমদানির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সেই হার ১০৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। তারােও মার্কিন পণ্য আমদানির উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো চাপের কাছে তারা নতি স্বীকার করবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভুল পথে চলতে চায়, তাহলে চীন শেষ পর্যন্ত লড়বে।
এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ফলে বিশ্বজুড়ে একটি মন্দা আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে।
তবে, চীনের অর্থনীতিও বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, শুল্কের ক্ষেত্রে তারা সহজে পিছিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। অর্থনীতিবিদদের মতে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর জন্য ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের একমাত্র জবাব হলো, “দেখা যাক কী হয়!”
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের টিকে থাকার একটি বড় কারণ হলো, দেশটির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও খেলনার মতো ভোগ্যপণ্য আমদানি করে।
অন্যদিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন, জীবাশ্ম জ্বালানি এবং জেট ইঞ্জিনের মতো শিল্প ও উৎপাদন সামগ্রী আমদানি করে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম ৭৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ১,১৪২ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
চীনের হাতেও আরও কিছু কৌশল রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, চীন সম্ভবত ফেন্টানাইল নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সহযোগিতা বন্ধ করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কোম্পানির বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করতে পারে এবং হলিউডের সিনেমা চীনে নিষিদ্ধ করতে পারে।
তবে, চীনের এই কৌশলগুলো তাদের বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করতে পারবে না। এরই মধ্যে চীন ও হংকং-এর শেয়ার বাজারে দরপতন দেখা যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের অর্থনীতির জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো জরুরি, যা এখনো সম্ভব হয়নি। সবমিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান