চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে রয়েছেন, যেখানে তিনি বাণিজ্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এই সফরে তার প্রধান উদ্দেশ্য হলো চীন এবং এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করা। তিনি বিশেষভাবে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং কম্বোডিয়া সফর করছেন।
শি জিনপিং জোর দিয়ে বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধে কারো জয় হয় না এবং এই ধরনের পদক্ষেপ কোনো ফল বয়ে আনে না।
ভিয়েতনামে পৌঁছে তিনি দেশটির সঙ্গে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৪০টি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম ও চীনের মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক উন্নয়নে সহযোগিতা অন্যতম। ভিয়েতনাম সরকারও চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো, বিশেষ করে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
এই সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে যখন বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য বিরোধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তবে চীন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমদানি-নির্ভর দেশ।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা ভাবছে। এই পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম চেষ্টা করছে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে শুল্কের বোঝা কমানো যায়।
ভিয়েতনাম সরকার তাদের অঞ্চল দিয়ে যাওয়া চীনা পণ্যের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।
এই অঞ্চলের দেশগুলো বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ, একদিকে যেমন তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের পণ্য রপ্তানি করে, তেমনই চীনের কাছ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে, ভিয়েতনামের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি করে। অন্যদিকে, চীন থেকে তারা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে। এই পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম চেষ্টা করছে, উভয় দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে।
এই অঞ্চলের দেশগুলোর এই অবস্থা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। কারণ, বাংলাদেশও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সতর্ক থাকা এবং কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান