বৃদ্ধ বয়সে বিশ্বজয়! সাইকেলে ১২ দেশ ভ্রমণ করা চীনা নারীর গল্প

চীনের একজন ৬৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা, যিনি সাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছেন, তার গল্প এখন অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। লি ডংজু নামের এই সাহসী নারী, যিনি চীনের হেনান প্রদেশের ঝেংঝৌ শহরের বাসিন্দা, জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছেন এক ব্যতিক্রমী পন্থায়।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, লি’র আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সূচনা হয় ৫৬ বছর বয়সে। এর আগে, তিনি ছিলেন সাধারণ একজন নারী, যিনি সংসারের গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিলেন। ২০০৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হন।

সেই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে তিনি বেছে নেন এক ভিন্ন পথ— সাইকেলে বিশ্বভ্রমণ। ২০১৩ সালে সাইকেলের প্রতি আকৃষ্ট হন লি। এরপর তিনি ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

প্রথমে তিনি চীনের বিভিন্ন শহরে সাইকেল চালান। এরপর ২০১৫ সালে, তিনি প্রথমবার আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বের হন। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় লি’কে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

ভাষার সমস্যা ছিল তার জন্য একটি বড় বাধা। তিনি শুধুমাত্র ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলতে পারতেন। স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তিনি গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্য নিতেন।

আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, তিনি ভ্রমণের নেশা ত্যাগ করেননি। লি’র ভ্রমণের তালিকায় রয়েছে কম্বোডিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও অনেক দেশ।

তিনি প্রায়ই পার্ক, পেট্রোল পাম্প এবং এমনকি কবরস্থানেও তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটাতেন। তবে অনেক সময় স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি সাহায্যও পেয়েছেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ৬টি ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণ করেন।

এরপর ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তার ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যায়। লি’র এই বিশ্বভ্রমণ শুধু একটি শখের বিষয় ছিল না, বরং এটি ছিল তার জীবন পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি বিশ্বাস করেন যে, ভ্রমণের মাধ্যমেই তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা হতাশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বর্তমানে তার মাসিক পেনশন প্রায় ৩,০০০ ইউয়ান (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪১,০০০ টাকা)।

এই সামান্য সঞ্চয় নিয়েই তিনি তার ভ্রমণের খরচ জোগান। লি ডংজুর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। তার গল্প প্রমাণ করে, বয়স কোনো বাধা নয়, যদি থাকে অদম্য ইচ্ছাশক্তি।

বর্তমানে তিনি কাজাখস্তান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত পর্যন্ত সাইকেল চালানোর পরিকল্পনা করছেন। তার লক্ষ্য, অন্তত ১০০টি দেশ ভ্রমণ করা। লি’র মতে, ভ্রমণ অনেকটা নেশার মতো— একবার এর স্বাদ পেলে, তা সহজে ভোলা যায় না।

তার এই অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা আমাদের সকলের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *