শিরোনাম: এক শতাব্দীর পুরোনো কষ্টের প্রতিচ্ছবি: চীনের অভিবাসীদের বন্দিদশার গল্প নিয়ে নতুন ব্যালে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ড ব্যালে কোম্পানির নতুন প্রযোজনা ‘দি অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ড প্রজেক্ট’ এক অন্যরকম নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে। এটি তৈরি হয়েছে সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরের অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ড ইমিগ্রেশন স্টেশনে ১৯১০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে বন্দী হওয়া অভিবাসীদের জীবন নিয়ে।
এই ব্যালের মাধ্যমে সেই সময়কার চীনা অভিবাসীদের দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনা এবং প্রতিরোধের গল্প তুলে ধরা হবে।
অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ডকে একসময় ‘পশ্চিমের এলিস আইল্যান্ড’ হিসেবেও উল্লেখ করা হতো। এখানে চীনের ‘এগিয়ে আসার নীতি’র কারণে আসা অনেক মানুষকে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে বন্দী করে রাখা হতো।
এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল এশীয়দের, বিশেষ করে চীনাদের, আমেরিকায় প্রবেশে বাধা দেওয়া। এর ফলস্বরূপ, সেখানকার বন্দীরা তাদের কষ্টের কথাগুলো দেয়ালের গায়ে খোদাই করে লিখে রেখেছিল, যা আজও সেই সময়ের নীরব সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
ব্যালেটির কেন্দ্রে রয়েছে অভিবাসীদের সেই সব কবিতা, যা তারা বন্দী অবস্থায় লিখেছিল।
এই কবিতাগুলো চীনা বংশোদ্ভূত সুরকার হুয়াং রুও’র সঙ্গীত এবং বিভিন্ন এশীয়-মার্কিন ও প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের শিল্পীদের নৃত্যশৈলীর মাধ্যমে পরিবেশিত হবে। ব্যালের প্রতিটি অংশে অভিবাসীদের টিকে থাকার সংগ্রাম, তাদের সংস্কৃতি এবং আমেরিকার সমাজের সাথে তাদের সংযোগের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ওকল্যান্ড ব্যালে’র পরিচালক গ্রাহাম লুস্টিগ জানান, এই প্রকল্পটি তাদের কোম্পানির সবচেয়ে বড় উদ্যোগ।
এর মাধ্যমে তারা আমেরিকান ইতিহাসের একটি কম পরিচিত দিক তুলে ধরতে চান, যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, এই ব্যালের গুরুত্ব অনেক। কারণ, বর্তমান সময়েও অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক চলছে এবং বিভিন্ন দেশে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দেখা যাচ্ছে।
ব্যালের একটি অংশে ১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজডুবিতে বেঁচে যাওয়া ছয়জন চীনা ব্যক্তির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাননি।
নৃত্যশিল্পী ফেং ইয়ে জানান, তিনি ব্যালের জন্য একটি বিশেষ দৃশ্য তৈরি করেছেন যেখানে একটি লম্বা বিনুনি ব্যবহার করা হয়েছে।
এই বিনুনি চীনা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সময়ের সাথে স্মৃতি বহন করে।
এই ব্যালে শুধু অতীতের একটি ঘটনাকে তুলে ধরে না, বরং অভিবাসন, সংস্কৃতি এবং মানবিক সম্পর্কের গভীরতাকেও প্রকাশ করে।
এটি দর্শকদের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি করে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।
সবশেষে, ‘দি অ্যাঞ্জেল আইল্যান্ড প্রজেক্ট’ একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়— ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে, অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান