মার্কিন-চীন: এআই-এর লড়াইয়ে নতুন মোড় আনছে চিপ প্রযুক্তি!

এআই (Artificial Intelligence) প্রযুক্তির দৌড়ে বিশ্বজুড়ে চলছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। এই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলছে তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ।

উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর চিপ (chip) তৈরির কৌশল এই লড়াইয়ের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। সম্প্রতি তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TSMC)-এর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বিনিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছে, যা এই চিপ প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ আরও একবার নাড়িয়ে দিয়েছে।

টিএসএমসি (TSMC), যারা বিশ্বের অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর চিপের (semiconductor chip) ৯০ শতাংশের বেশি উৎপাদন করে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনাতে (Arizona) দুটি নতুন অত্যাধুনিক প্যাকেজিং (advanced packaging) কারখানা তৈরি করতে চলেছে।

এই প্যাকেজিং প্রযুক্তি স্মার্টফোন (smartphone) থেকে শুরু করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং সামরিক সরঞ্জাম—সবকিছুতেই ব্যবহৃত হয়। উন্নত প্যাকেজিং প্রযুক্তি আসলে কী, এবং কিভাবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এআই (AI) আধিপত্যের লড়াইকে প্রভাবিত করছে, তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

সহজ ভাষায় বললে, উন্নত প্যাকেজিং হলো একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একটি চিপকে (chip) সুরক্ষা দিয়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়।

উন্নত প্যাকেজিং পদ্ধতিতে গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (GPU), সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) অথবা উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন মেমোরির (HBM) মতো একাধিক চিপকে (chip) কাছাকাছি স্থাপন করা যায়। এর ফলে ডেটা আদান-প্রদান দ্রুত হয়, কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং শক্তি খরচও কমে আসে।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো অফিসের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যেকার কর্মীদের দ্রুত ও সহজে কাজ করার সুবিধার মতো।

এই উন্নত প্যাকেজিং প্রযুক্তি তৈরি করা হয় মূলত ‘কোওস’ (CoWoS) নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। টিএসএমসি (TSMC) উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (AI) প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে, এআই (AI) অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটিং (computing)-এর চাহিদা বাড়ছে, এবং এই চাহিদা মেটাতে কোওস (CoWoS) প্রযুক্তির জুড়ি মেলা ভার। এনভিদিয়ার (Nvidia) মতো এআই (AI) প্রসেসর প্রস্তুতকারকদের জন্য এই প্রযুক্তি অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্যাকেজিং প্রযুক্তি (advanced packaging technology) এখন শুধু একটি কারিগরি বিষয় নয়, বরং এটি এআই (AI) প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের চাবিকাঠি।

তাই, টিএসএমসি (TSMC)-এর এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র (US) একদিকে যেমন তাদের চিপ (chip) উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারবে, তেমনি এআই (AI) প্রযুক্তির দৌড়ে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করতে পারবে।

একইসঙ্গে, তাইওয়ানের (Taiwan) উপর থেকে সরবরাহ শৃঙ্খলের ঝুঁকিও কমবে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের (Bangladesh) জন্যেও রয়েছে সুযোগ। উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে টিকে থাকতে হলে, আমাদেরও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) শিক্ষায় জোর দিতে হবে।

গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা এখন সময়ের দাবি। উন্নত বিশ্ব যেভাবে এআই (AI) প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে, তাতে বাংলাদেশেরও (Bangladesh) উচিত নিজেদের প্রস্তুত করা, যাতে ভবিষ্যতে আমরাও এই দৌড়ে শামিল হতে পারি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন (CNN)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *