ফ্যাকাসে হচ্ছে চিপস, কমছে ক্রেতা! দুঃসংবাদ?

খরচ বাড়ছে, স্ন্যাক্স কেনা কমাচ্ছে আমেরিকানরা।

আমেরিকায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। বাজারের হিসাব অনুযায়ী, চিপস ও কুকিজের মতো মুখরোচক খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা এখন আগের চেয়ে অনেক কম কিনছেন। বাজার গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্ন্যাক্স বা হালকা খাবার কেনা কমিয়ে দিয়েছেন দেশটির অনেক মানুষ।

এনআইকিউ (NIQ) নামক একটি বাজার গবেষণা সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ আমেরিকান বেশি দামের কারণে স্ন্যাক্স কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারের অন্য অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেড়েছে, যার চাপ গিয়ে পড়ছে মানুষের পকেটে। অনেকেই এখন কম গুরুত্বপূর্ণ খরচগুলো কমিয়ে দিচ্ছেন।

এর ফলে খাদ্য প্রস্তুতকারক বড় কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়েও মন্দা দেখা যাচ্ছে।

যেমন, বিশ্বখ্যাত খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি পেপসিকো (PepsiCo) জানিয়েছে, তাদের ফিতো-লে (Frito-Lay) বিভাগের স্ন্যাক্স বিক্রি গত প্রান্তিকে ৩ শতাংশ কমেছে।

একই অবস্থা ক্যাম্পবেলের (Campbell)। এই কোম্পানি গোল্ডফিশ (Goldfish) ও স্নাডার্স অফ হ্যানোভার (Snyder’s of Hanover) -এর মতো জনপ্রিয় স্ন্যাক্স উৎপাদন করে। তারাও জানিয়েছে, তাদের স্ন্যাক্স বিক্রি ২ শতাংশ কমেছে।

এছাড়া, হোস্টেস (Hostess) কোম্পানির স্ন্যাক্স বিক্রিও কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।

বাজার গবেষণা সংস্থা সারকানার (Circana) হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে শুধু নোনতা স্ন্যাক্সের বিক্রি ০.৩ শতাংশ কমেছে। কুকিজের বিক্রিও একই হারে কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু স্ন্যাক্স নয়, বিমানের টিকিট, বাড়ির সংস্কার এবং পোশাকের মতো বড় খরচগুলোও কমিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতারা।

মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এবং বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যনীতির কারণেও অনেক কোম্পানি ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত মাসে খুচরা বিক্রি সামান্য বেড়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মার্কিন অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং সম্ভবত মন্দার দিকে যাচ্ছে।

খাবার সামগ্রীর মধ্যে স্ন্যাক্সের দাম তুলনামূলকভাবে দ্রুত বাড়ছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মুদি দোকানের পণ্যের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। যেখানে শুধু চিপসের দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ।

বর্তমানে একটি মাঝারি আকারের (১৬ আউন্স) চিপসের প্যাকেট কিনতে প্রায় ৬.৫০ ডলার (প্রায় ৭০০ টাকা) খরচ হচ্ছে।

যেখানে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর দাম ছিল প্রায় ৫.০৫ ডলার (প্রায় ৫৫০ টাকা)।

খরচ কমাতে অনেক ক্রেতা এখন বড় ব্র্যান্ডের পরিবর্তে ওয়ালমার্ট (Walmart) বা কোস্টকো’র (Costco)-এর মতো নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য কিনছেন।

এছাড়া, অনেক কোম্পানি পণ্যের আকার কমিয়ে দিলেও দাম একই রাখছে, যা ‘সংকোচন মুদ্রাস্ফীতি’ (shrinkflation) নামে পরিচিত।

মোটকথা, উন্নত বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যপণ্যের দামে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়ছে ভোক্তাদের ওপর।

এর থেকে আমাদের দেশের ভোক্তারাও যে খুব একটা দূরে আছে, তা বলা যাবে না।

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন আসে, আমেরিকার এই চিত্র তারই একটি উদাহরণ।

তথ্য সূত্র: (বাজার গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট অবলম্বনে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *