উচ্চ কোলেস্টেরল: স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা নাকি ওষুধ?
উচ্চ কোলেস্টেরল এখন একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও এই সমস্যা বাড়ছে, তাই এর কারণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধের উপায় জানা অত্যন্ত জরুরি।
সাধারণভাবে, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ওষুধের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই লেখায় আমরা দেখবো, উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং ওষুধের মধ্যে কোনটি বেশি কার্যকর।
কোলেস্টেরল আসলে কী?
কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বি, যা আমাদের শরীরের কোষ তৈরি এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে, শরীরে এর মাত্রা বেড়ে গেলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
সাধারণত, শরীরে দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে: লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল), বা খারাপ কোলেস্টেরল এবং হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল), বা ভালো কোলেস্টেরল। এলডিএল-এর মাত্রা বেশি হলে তা ধমনীতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণ ও ঝুঁকি
উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান এবং কিছু ক্ষেত্রে বংশগত প্রবণতা। অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ করলে এলডিএল বাড়ে।
উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে এলডিএল কমানো যেতে পারে।
এর জন্য খাদ্য তালিকায় ফল, সবজি, শস্য এবং মাছ যোগ করা প্রয়োজন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যেমন: ওটমিল এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল, এলডিএল কমাতে সহায়ক। খাদ্যতালিকা পরিবর্তনের ফলে শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ব্যায়ামের গুরুত্ব
নিয়মিত ব্যায়াম এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এইচডিএল, এলডিএল কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি ব্যায়াম করা উচিত, যেমন— দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো।
ওষুধের প্রয়োজনীয়তা
অনেক সময়, খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে, ডাক্তাররা স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন।
স্ট্যাটিন ওষুধ লিভারে কোলেস্টেরল তৈরি হওয়া কমায়। যাদের হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য স্ট্যাটিন খুবই কার্যকর। তবে, স্ট্যাটিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে, যেমন— মাংসপেশিতে ব্যথা।
এছাড়াও, যাদের উচ্চ কোলেস্টেরল বংশগতভাবে পাওয়া যায়, তাদের ক্ষেত্রেও স্ট্যাটিন উপকারী হতে পারে।
অন্যান্য ওষুধ
স্ট্যাটিন ছাড়াও, কোলেস্টেরল কমানোর জন্য আরও কিছু ওষুধ রয়েছে। যাদের স্ট্যাটিন গ্রহণে সমস্যা হয়, তাদের জন্য PCSK9 ইনহিবিটরস-এর মতো ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই ওষুধগুলো এলডিএল কমাতে সাহায্য করে এবং স্ট্যাটিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করে।
উপসংহার
উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
তবে, যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত, সে বিষয়ে জানতে এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: Healthline