কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে! ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকার ৬টি উপায়

আজকাল হৃদরোগের সমস্যা বাড়ছে, আর এর অন্যতম প্রধান কারণ হল শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরল (Cholesterol)। উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে, যেমন হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) বা স্ট্রোকের (Stroke) সম্ভাবনা থাকে। তাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াই কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব।

কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট (Saturated Fat) এবং ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fat) যুক্ত খাবার বর্জন করা উচিত। দুগ্ধজাত খাবার, মাংস এবং পাম ও নারকেল তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে।

রাস্তার ফাস্ট ফুড (Fast Food) ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া যায়। খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – FDA) কৃত্রিম ট্রান্স ফ্যাটের ব্যবহার সীমিত করার কারণে এখন এটি আগের চেয়ে কম পাওয়া যায়।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (American Heart Association) দৈনিক ক্যালোরির ৬%-এর কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের পরামর্শ দেয়। ট্রান্স ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর, কারণ এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) খাদ্যতালিকায় ১%-এর কম ট্রান্স ফ্যাট রাখার পরামর্শ দেয়।

ডায়েটে (Diet) আরও বেশি করে দ্রবণীয় ফাইবার (Soluble Fiber) যুক্ত করা উচিত, যা LDL কমাতে সাহায্য করে। ওটস (Oats) এবং বিভিন্ন ফল ও সবজিতে (Fruits and Vegetables) প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে।

সকালে ওটমিল (Oatmeal) খাওয়া অথবা ইসুবগুলের (Psyllium) মতো সাপ্লিমেন্ট (Supplement) গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই এই ফাইবার গ্রহণ করা যেতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise) করাও খুব জরুরি। অতিরিক্ত ওজনের (Overweight) কারণেও কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

নিয়মিত হাঁটাচলা (Walking), দৌড়ানো (Jogging), বাইক চালানো (Biking) অথবা সাঁতারের (Swimming) মতো ব্যায়ামগুলো কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা ভালো, অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে ৫ দিন।

অ্যালকোহল (Alcohol) সেবন কমালে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। অ্যালকোহল সেবনের ফলে শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides) এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে।

সম্প্রতি, একটি গবেষণায় (2024) দেখা গেছে, যারা বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল পান করেন, তাদের মধ্যে অ্যালকোহল সেবন কমানোর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩% পর্যন্ত কমেছে।

কিছু সাপ্লিমেন্ট (Supplement) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acids) সমৃদ্ধ মাছের তেল (Fish Oil) ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, এটি সরাসরি LDL কমায় না।

রসুন (Garlic) সাপ্লিমেন্ট সেবনেও LDL-এর মাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে, এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

উচ্চ কোলেস্টেরলের কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ (Symptoms) নেই। তাই, কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো জরুরি। স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) অনুযায়ী, যাদের বয়স ২০ বছরের বেশি, তাদের প্রতি ৪-৬ মাস অন্তর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানো উচিত।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। যদি এতে কাজ না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হতে পারে।

তাই, সুস্থ থাকতে হলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রা পরিকল্পনা করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: হেলথলাইন (Healthline)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *