স্ট্রোকের পর: শীর্ষ থেকে কিভাবে অথর্ব হলেন কোরিওগ্রাফার?

বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার কোরাল মেসাম, যিনি এক সময় ছিলেন সাফল্যের শীর্ষে, কিভাবে একটি স্ট্রোকের কারণে জীবনের মোড় ঘুরে গেল, সেই গল্প শুনিয়েছে। ২০১৯ সালে স্টিভ ম্যাকুইনের ‘ব্লিৎজ’ ছবিতে নাচের দৃশ্য তৈরি করার কয়েক মাস পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তার জীবনের এই কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন নিউরোফিজিওলজিস্ট কার্লি ক্রিস্টেনসেন।

কোরাল মেসাম, যিনি ছোটবেলা থেকেই নাচের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, স্টিভ ম্যাকুইনের ‘স্মল অ্যাক্স’ সিরিজের ‘লাভার্স রক’-এর মতো ছবিতেও কাজ করেছেন।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে ‘ব্লিৎজ’-এর কাজ করার সময় তিনি একেবারে অন্যরকম এক জগতে প্রবেশ করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিতে, তিনি একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্লাবের নাচের দৃশ্য তৈরি করেন, যেখানে সাওইরসে রোনান এবং সিজে বেকফোর্ডের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছিলেন।

কোরাল মেসামের কথায়, “আমি স্টিভের (স্টিভ ম্যাকুইন) জন্য সবকিছু করতে পারি, কারণ আমাদের রুচি একই।”

‘ব্লিৎজ’-এর পরেই তিনি নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর মঞ্চ নাটক ‘দ্য ফার্স্ট শ্যাডো’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এই নাটকের জন্য নাচের পরিকল্পনা করার সময়, তিনি লিন্ডি হপ (Lindy Hop) নামক এক ধরনের নাচের সঙ্গে পরিচিত হন।

এই নাচের মাধ্যমে তিনি ১৯৫০ দশকের আমেরিকার একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

নাটকের চরিত্রগুলির মাধ্যমে তিনি সেই সময়ের তরুণ সমাজের বিদ্রোহ এবং পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরেন।

কিন্তু সবকিছু যেন হঠাৎ করেই বদলে যায়।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে, কোরাল মেসাম একা বাড়িতে ছিলেন, যখন তার স্ট্রোক হয়।

এর ফলে তার শরীরের বাঁ দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি জানান, “আমি যেন এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে ছিলাম।

একসময় আমি পুরো পৃথিবীর উপরে ছিলাম, আর এখন আমি হাঁটতে পর্যন্ত পারি না।”

স্ট্রোকের পর আট সপ্তাহ হাসপাতালে, এরপর পুনর্বাসন কেন্দ্রে কঠিন সময় কাটিয়েছেন তিনি।

এমনকি এই সময়ে তার ৬ বছরের সম্পর্কও ভেঙে যায়।

মেসাম বলেন, “আমি আমার শরীরকে ভালোবাসতাম, জীবনকে উপভোগ করতাম।

কিন্তু স্ট্রোকের পরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

যেন নরকে চলে এসেছি।”

তিনি জানান, তার বাঁ হাত নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হতো।

তবে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের সহায়তায় তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন।

নিউরোফিজিওলজিস্ট কার্লি ক্রিস্টেনসেন বলেন, “স্ট্রোকের প্রভাব অনেক গভীর হতে পারে, কিন্তু কোরালের মধ্যে আমি সবসময়ই ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখেছি।”

কোরাল এখন আবার কাজে ফেরার চেষ্টা করছেন এবং আগের থেকে আরও শক্তিশালী হতে চান।

তিনি জানান, তিনি জীবনকে ভালোবাসেন এবং এখনও অনেক কিছু করার আছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *