৯0 বছর বয়সী ব্রিটিশ পর্বতারোহী স্যার ক্রিস বনিংটন, যিনি এখনো পর্বত আরোহণে ভালোবাসেন, জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কিভাবে সাফল্যের শিখরে ওঠা যায়, সেই গল্প শুনিয়েছেন তিনি।
ক্রিস বনিংটন একাধারে একজন বিখ্যাত পর্বতারোহী, লেখক এবং অভিযাত্রী। ১৯৩৫ সালে লন্ডনে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি একসময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং আউটওয়ার্ড বাউন্ড প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন।
১৯৭৫ সালে তিনি এভারেস্টের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রথম সফল অভিযান পরিচালনা করেন। এর দশ বছর পর, ১৯৮৫ সালে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন।
পর্বতারোহণে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন। তার লেখা আত্মজীবনী ‘অ্যাসেন্ট’ (Ascent) বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বর্তমানে তিনি উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের একটি অঞ্চলে বসবাস করেন।
জীবনে সবচেয়ে বেশি খুশি কখন হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন আমি পাহাড়ে উঠতাম, তখন আমি সবচেয়ে বেশি খুশি ছিলাম।
সবচেয়ে বড় ভয় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বুড়িয়ে যাওয়া।
তার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী? উত্তরে তিনি বলেন, “আমার বিশাল একটা শেড আছে, যেখানে আমার সমস্ত সরঞ্জাম, এমনকি বরফ কাটার কুঠারগুলোও রাখা আছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হল সেই কুঠারটি, যা নিয়ে আমি এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলাম।
নিজেকে তিনটি শব্দে বর্ণনা করতে বললে তিনি বলেন, “কর্মঠ, স্থিতিশীল এবং সহানুভূতিশীল।
জীবনে কিসের অভাব অনুভব করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রিয়জনদের হারানো।
তার প্রথম সন্তান কনরাড আড়াই বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় মারা যায়, যা তিনি আজও ভুলতে পারেন না।
কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দুজন মানুষ- আমার ৫২ বছরের স্ত্রী ওয়েন্ডি এবং আট বছরের স্ত্রী লরেটোকে।
জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসেও নতুন করে ভালোবাসার সন্ধান পাওয়াটা অসাধারণ।
ছোটবেলায় তিনি কি হতে চেয়েছিলেন? উত্তরে তিনি বলেন, “আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম একজন সফল জেনারেল হব, যিনি সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন।
জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি যখন সেনাবাহিনী ছেড়ে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ইউনিলিভারে চাকরি করি, সেই কাজটি ছিল আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন।
সেখানে অনেক নিয়মকানুন ছিল, যেমন দোকানে প্রবেশ করার সময় টুপি তুলে দোকানদারকে সম্মান জানাতে হতো এবং মার্জারিন বিক্রি করতে হতো।
যদি অতীত পরিবর্তন করার সুযোগ থাকত, তাহলে কী করতেন? উত্তরে তিনি বলেন, “কনরাডের মৃত্যু আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতাম না।
কার মতো হতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাইনহোল্ড মেসনার, কারণ তিনি আমার চেয়েও ভালো পর্বতারোহী ছিলেন।
নিজের সন্তানদের জন্য কী রেখে যেতে চান? তিনি বলেন, “সহানুভূতি, কর্মঠতা এবং স্থিতিশীলতা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
আমি আমার সন্তানদের এবং নাতি-নাতনিদের মধ্যে এই গুণগুলো দেখতে চাই।
মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি কখন গিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এমন অনেকবার হয়েছে, যখন আমি মৃত্যুর খুব কাছে গিয়েছি, তাই নির্দিষ্ট করে একটি ঘটনা বলা কঠিন।
জীবনের গুণগত মান উন্নত করতে তিনি কী করতে চান? তিনি বলেন, “আরো বেশি শারীরিক সক্রিয়তা প্রয়োজন।
তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন কী? উত্তরে তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালে এভারেস্ট জয় করা, যখন অনেকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল।
সেই অভিযানটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পর্বতারোহণের চ্যালেঞ্জ। রাতে ছোট্ট একটি তাঁবুতে বসে আমি ভাবতাম, কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
রাতে কিসের জন্য ঘুম আসে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার নাক ডাকার কারণে লরেটোর ঘুম হয় না!
জীবন তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী শিক্ষা দিয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন সবকিছু খুবই কঠিন মনে হয়, তখনও বুঝতে হবে যে তুমি জীবিত আছ, আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান